ওয়াহীর জ্ঞান ১৬ পর্ব | শরিফ গাজী অফিসিয়াল

ওয়াহীর জ্ঞান ১৬ পর্ব





সপ্তদশ অধ্যায়ঃ
=========
•যাকাত ও সদাকাহ।
====>>==========
•কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে যাকাত।
•ওশর বা উৎপাদিত ফসলের যাকাত।
•যাকাতুল ফিতর।
•নজর বা মানত।
•কুরবানী।
•কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে নফল সদাকাহ/দান।
•কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে রিবা/সুদ।



==== বিষয়ঃ কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে যাকাত ====
(যাকাত) زكاة শব্দটি (ز ك و) ধাতু থেকে এসেছে। যার অর্থ বৃদ্ধি, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। যাকাত শব্দের (form I verb Past) হল زَكَىٰ (যাকায়া) যার অর্থ হল বৃদ্ধি পাওয়া, বর্ধিত হওয়া, পবিত্র হওয়া, সঠিক হওয়া। এর (form II verb Past) হল  زَكَّىٰ(যাক্কা) যার অর্থ পবিত্র করা, পবিত্র বলা, বৃদ্ধি করা, সঠিক বলা, ভাল বলা, প্রশংসা করা, সুপারিশ করা, যাকাত আদায় করা। এর (form V verb Past) হল تَزَكَّىٰ (তাযাক্কা) যার অর্থ শোধিত হওয়া, পবিত্র হওয়া, বর্ধিত হওয়া, যাকাত দেওয়া, এর noun  (أَزْكَىٰ) (আযকায়া) অর্থ অধিকতর পরিচ্ছন্ন, পবিত্রতর, পবিত্রতার জন্য অধিকতর সহায়ক, এর noun  زَكِيّ (যাকী) যার অর্থ পবিত্র, নির্দোষ, সৎ, ন্যায়পরায়ন। ইসলামি পরিভাষায় যাকাত বলা হয়, শরিয়তের নির্দেশ অনুযায়ী স্বীয় মালের একটা নির্ধারিত অংশ তার হকদারদের মাঝে বন্টন করা এবং তার আয় হতে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা।

যে যাকাত আল্লাহ বিধিবদ্ধ করেছেন তা হল। (১) সম্পদে ফরজ যাকাত। ও (২) দায়িত্বে ফরজ যাকাত যাকে যাকাতুল ফিতর বা ফিতরা বলা হয়, যা প্রতিটি মুসলিমের উপর রমজান মাসের শেষে আদায় করা ফরজ হয়।

চার প্রকার সম্পদের উপর যাকাত ফরয।
(ক) সোনা ও রুপা এবং সঞ্চিত অর্থের যাকাত। 
(খ) জমি থেকে উৎপন্ন ফসলের যাকাত যাকে ওশর বলা হয়।
(গ) “বাহিমাতুল আন‘আম” তথা উট, গরু, দুম্বা-ভেড়া ও ছাগল এর যাকাত।
(ঘ) ব্যবসা সামগ্রীর যাকাত।

>>> যাকাত ইসলামের ভিত্তি <<<
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ
ইসলাম হলো- তুমি সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন ইলাহ নেই আর অবশ্যই মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানের সিয়াম পালন করবে, বায়তুল্লাহ পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হাজ্জ করবে। সহীহ মুসলিম: হাদীস নং-১

>>> যাকাত পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে <<<
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلاتَكَ سَكَنٌ لَهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
তাদের সম্পদ থেকে সাদাকাহ (যাকাত) গ্রহণ কর যাতে তা দিয়ে তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে পারো আর তুমি তাদের জন্য দো‘আ কর, নিঃসন্দেহে তোমার দু‘আ হচ্ছে তাদের জন্য প্রশান্তিকর আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। তারা কি জানে না যে নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং সদাকাহ গ্রহণ করেন আর নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। আত্-তাওবাহ, ৯/১০৩-১০৪

>>> যাকাত সম্পদ বৃদ্ধি করে <<<
وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ رِبًا لِيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلا يَرْبُو عِنْدَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ 
আর তোমরা রিবায় (সুদে) যা কিছু দিয়ে থাকো, মানুষের ধন-সম্পদে যেন তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়, আসলে আল্লাহর নিকটে তা বৃদ্ধি পায় না আর আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাকো প্রকৃতপক্ষে তারাই বহুগুণ সম্পদ লাভ করে। আর-রূম, ৩০/৩৯

لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلأنْفُسِكُمْ وَمَا تُنْفِقُونَ إِلا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لا تُظْلَمُونَ
তাদেরকে হিদায়াত করার দায়িত্ব তোমার নয়, কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হিদায়াত করেন এবং তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর তা তোমাদের নিজেদের জন্যই আর তোমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যয় করে থাকো এবং তোমরা হালাল সম্পদ হতে যা ব্যয় করবে তা তোমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে আর তোমাদের প্রতি যুলম করা হবে না। আল-বাকারাহ, ২/২৭২

>>> সম্পদশালীদের জন্য যাকাত আদায় করা ফরয <<<
وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوا لأنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
আর তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর এবং তোমরা নিজেদের জন্য যে নেক আমল আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর নিকট পাবে, তোমরা যা করছো নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। আল-বাকারাহ, ২/১১০

لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ
তোমরা কক্ষনো কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় করবে আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে জ্ঞাত আছেন। আলে‘ইমরান, ৩/৯২

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু’আয ইবনু জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে ইয়ামানের (শাসক নিয়োগ করে) পাঠানোর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন,
" إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا أَهْلَ كِتَابٍ، فَإِذَا جِئْتَهُمْ فَادْعُهُمْ إِلَى أَنْ يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ، فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ،
তুমি আহলে কিতাবের কাছে যাচ্ছো। কাজেই তাদের কাছে যখন পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দিবে যেন তারা সাক্ষ্য দিয়ে বলে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত স্বলাত ফরয করেছেন। যদি তারা এ কথাও মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর সাদকা (যাকাত) ফরয করেছেন- যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে। সহীহুল বুখারী: ১৩৯৫, ১৪৯৬

>>> মুমিনরাই যাকাত আদায় করে <<
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে আর তারাই আখিরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে। লুকমান। ৩১/৪, আন্‌-নামাল, ২৭/৩

رِجَالٌ لا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالأبْصَارُ
সেইসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখে না, তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। আন-নূর, ২৪/৩৭

الَّذِينَ لا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ بِالآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ
যারা যাকাত দেয় না আর তারাই আখিরাতকে অস্বীকারকারী। ফুসসিলাত, ৪১/৭

>>> সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিতে হবে <<<
وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا
আর সে তার পরিবার-পরিজনকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল তার রবের সন্তোষভাজন। মারইয়াম, ১৯/৫৫

>>> তাদের প্রতিদান <<<
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ 
নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে ও সালাত প্রতিষ্ঠা করেছে এবং যাকাত প্রদান করেছে, তাদের জন্য তাদের পুরষ্কার তাদের রবের নিকটে রয়েছে, এবং তাদের কোন ভয় নেই আর তারা চিন্তিত হবে না। আল-বাকারাহ, ২/২৭৭

الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ
যারা নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ফলে তাদের জন্য তাদের রবের নিকট তাদের প্রতিদান রয়েছে এবং তাদের কোন ভয় নেই আর তারা চিন্তিত হবে না। আল-বাকারাহ, ২/২৭৪

>>> যাকাতের হকদার <<<
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاِبْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
নিশ্চয় সাদাকাহ (যাকাত) হচ্ছে গরীবদের জন্য ও অভাবগ্রস্তদের জন্য আর এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য ও (দীনের প্রতি) তাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে ও দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে ও ঋণগ্রস্তদের সাহায্যার্থে ও আল্লাহর পথে (অর্থাৎ জিহাদে) এবং মুসাফিরদের সাহায্যার্থে, এই হুকুম আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়।  আত্-তাওবাহ, ৯/৬০

لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ لا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الأرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ
সদাকাহ ঐ সব লোকেদের জন্য যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ হয়ে গেছে, জীবিকার সন্ধানে জমিনে ঘোরাফিরা করতে সক্ষম নয়, না চাওয়ার কারণে অনবগত লোকেরা তাদেরকে সচ্ছল মনে করে, তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনবে, তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না এবং তোমরা সম্পদ থেকে যা ব্যয় কর অবশ্যই আল্লাহ সে সম্পর্কে ভালভাবে অবগত আছেন। আল-বাকারাহ, ২/২৭৩

>>> যাকাত ফরজ হওয়ার সময় <<<
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ اسْتَفَادَ مَالًا فَلَا زَكَاةَ عَلَيْهِ حَتَّى يَحُولَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ
কারো অর্জিত সম্পদে যাকাত নেই যতক্ষণ না তার উপর এক বছর অতিবাহিত হয়। (আত-তিরমিযী)

>>> যাকাতের নিসাব <<<
আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ مِنَ التَّمْرِ صَدَقَةٌ، وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ أَوَاقٍ مِنَ الْوَرِقِ صَدَقَةٌ، وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ ذَوْدٍ مِنَ الإِبِلِ صَدَقَةٌ
পাঁচ ওসাকের কম পরিমাণ খেজুরের যাকাত নেই। পাঁচ ওকিয়ার কম পরিমাণ রুপার যাকাত নেই এবং পাঁচটির কম উটের যাকাত নেই। সহীহুল বুখারী: ১৪৫৯

(১) ৬০ সা-এ এক ওয়াসাক হয়। আর এক সা সমান দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম সে হিসাব অনুযায়ী মোটামুটি ৫ ওয়াসাক সমান ২০ মণ। অর্থাৎ উৎপাদিত খেজুর ২০ মণ হলে তার উপর যাকাত ফরজ হয়, এর কম হলে যাকাত ফরজ হবে না।

(২) ৪০ দিরহামে হয় এক উকিয়া। ৫ উকিয়া সমান ২০০ দিরহাম। ২০০ দিরহাম সমান সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এর কম পরিমাণ রুপার যাকাত ফরজ হয় না।

(৩) যাউদ, তিন হতে দশ পর্যন্ত উটের পালকে যাউদ বলে। এখানে হাদীসের মর্ম এই যে, ৫টি উটের কমে যাকাত ফরজ হয় না। যা অন্যান্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন গরু ৩০টির কম, ছাগল-ভেড়া ৪০ টির কমে যাকাত ফরজ হয় না।

>>> সোনা-রুপার যাকাত <<<
স্বর্ণ- রৌপ্যের ওপর নিসাব পরিমাণ হলে সর্বাবস্থায় যাকাত ফরজ। আল্লাহ বলেন-
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لأنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ
এবং যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে আর তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (আর সেদিন বলা হবে), এগুলো তাই যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর। আত্-তাওবা, ৯/৩৪-৩৫

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
فَإِذَا كَانَتْ لَكَ مِائَتَا دِرْهَمٍ وَحَالَ عَلَيْهَا الْحَوْلُ فَفِيهَا خَمْسَةُ دَرَاهِمَ وَلَيْسَ عَلَيْكَ شَيْءٌ يَعْنِي فِي الذَّهَبِ حَتَّى يَكُونَ لَكَ عِشْرُونَ دِينَارًا فَإِذَا كَانَ لَكَ عِشْرُونَ دِينَارًا وَحَالَ عَلَيْهَا الْحَوْلُ فَفِيهَا نِصْفُ دِينَارٍ فَمَا زَادَ فَبِحِسَابِ ذَلِكَ 
যখন তোমার নিকট দু’শত দিরহাম ( সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা) জমা হয় এবং একটি বছর তার উপর পূর্ণ হবে, তখন তাতে ৫ দিরহাম যাকাত দিতে হবে  আর তোমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত যাকাত দিতে হবে না যতক্ষণ না তোমার নিকট ২০টি দীনার (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ) জমা হওয়ার পর এক বছর পূর্ণ হবে। এতে তোমাকে দিতে হবে (৪০ ভাগের এক ভাগ) অর্ধ দীনার আর এর অধিক হলে, ঐ অনুপাতে হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। (আবূ দাউদ)


==== বিষয়ঃ ওশর বা উৎপাদিত ফসলের যাকাত ====
ওশর: عُشْرٌ ওশর এর অর্থ হচ্ছে উৎপন্ন শস্যের এক দশমাংশ দান করা। অর্থাৎ বৃষ্টির পানিতে ও বিনা সেচে উৎপাদিত শস্যের দশ ভাগের এক ভাগ বা বিশ মণে দুই মণ, আর সেচের মাধ্যমে উৎপাদিত হলে নিসফ ওশর বা বিশ মণে এক মণ বর্ণিত নিয়মানুসারে যাকাত বা ওশর দিতে হবে। আর আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الأرْضِ وَلا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيهِ إِلا أَنْ تُغْمِضُوا فِيهِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের উপার্জিত উত্তম সম্পদ থেকে এবং তোমাদের জন্য ভূমি হতে আমি যা উৎপন্ন করেছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় কর এবং নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার মনস্থ করো না অথচ চোখ বন্ধ করা ছাড়া তোমরা তা গ্রহণ করো না আর জেনে রাখ, আল্লাহ মহাসম্পদশালী, প্রশংসিত। আল-বাকারাহ, ২/২৬৭

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ صَدَقَةٌ
পাঁচ ওয়াসক এর কম পরিমাণ উৎপন্ন ফসলের উপর সাদকা (অর্থাৎ উশর/নিসফে উশর) নেই। সহীহুল বুখারী: ১৪৪৭

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
فِيمَا سَقَتْ السَّمَاءُ وَالْعُيُونُ أَوْ كَانَ عَثَرِيًّا الْعُشْرُ وَمَا سُقِيَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ.
যে জমি আসমানের পানি এবং নদী খাল বিল প্রভৃতির পানি দ্বারা সিক্ত হয়েছে অথবা যে জমির মাটি খুব উর্বর ও রসালো, সে জমিতে উৎপাদিত ফসলের এক দশমাংশ ওশর দিতে হবে। আর যে জমিতে পানি সিঞ্চন করতে হয় তা হতে উৎপাদিত ফসলের বিশভাগের এক ভাগ অর্থাৎ অর্ধ ওশর দিতে হবে। সহীহুল বুখারী: ১৪৮৩

==== বিষয়ঃ যাকাতুল ফিতর ====
যাকাতুল ফিতর বা ফিতরা হলঃ রমজানের রোজার শেষে প্রতিটি মুসলিমের উপর যে যাকাত ফরয হয় তাকে ফিতরা বলা হয়। হাদীসে এর নাম সদাকাতুল ফিতর ও যাকাতুল ফিতর উভয়ই পাওয়া যায়। এটি শরীরের যাকাত, এর উদ্দেশ্য হল রমযানের নিরর্থক কথা ও অশ্লীল আচরণ থেকে পবিত্র করা এবং মিসকিনদের খাদ্য প্রদান করা। খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা প্রদান করাই হল রাসূলের সুন্নাত। আবূ সা’ঈদ খূদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 
يَوْمَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ. وَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ وَكَانَ طَعَامَنَا الشَّعِيرُ وَالزَّبِيبُ وَالأَقِطُ وَالتَّمْرُ
আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ঈদের দিন এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য সাদাকাতুল ফিতর হিসাবে আদায় করতাম। আবূ সা’ঈদ আরও বলেন, আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর। সহীহুল বুখারী: ১৫১০

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 
زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيرِ وَالْكَبِيرِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ
প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা‘ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের স্বলাতে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সহীহুল বুখারী: ১৫০৩

 ইবনু উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 
فَرَضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَدَقَةَ الْفِطْرِ ـ أَوْ قَالَ رَمَضَانَ ـ عَلَى الذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالْحُرِّ وَالْمَمْلُوكِ، صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، فَعَدَلَ النَّاسُ بِهِ نِصْفَ صَاعٍ مِنْ بُرٍّ. فَكَانَ ابْنُ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ يُعْطِي التَّمْرَ، فَأَعْوَزَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ مِنَ التَّمْرِ فَأَعْطَى شَعِيرًا، فَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يُعْطِي عَنِ الصَّغِيرِ وَالْكَبِيرِ، حَتَّى إِنْ كَانَ يُعْطِي عَنْ بَنِيَّ، وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ يُعْطِيهَا الَّذِينَ يَقْبَلُونَهَا، وَكَانُوا يُعْطُونَ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক পুরুষ, মহিলা, আযাদ ও গোলামের পক্ষ থেকে সদাকাতুল ফিতর অথবা বলেছেন সদাকা-ই-রমাদ্বন হিসাবে এক সা‘ খেজুর বা এক সা‘ যব আদায় করা ফরয করেছেন। তারপর লোকেরা অর্ধ সা‘ গমকে এক সা‘ খেজুরের সমমান দিতে লাগল। (রাবী নাফি’ বলেন) ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু খেজুর (সদাকাতুল ফিতর হিসাবে) দিতেন। এক সময় মাদীনায় খেজুর দুর্লভ হলে যব দিয়ে তা আদায় করেন। অতঃপর ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রাপ্ত বয়স্ক ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সকলের পক্ষ থেকেই সদাকাতুল ফিতর আদায় করতেন, এমনকি আমার সন্তানদের পক্ষ থেকেও সদাকার দ্রব্য গ্রহীতাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং ঈদের এক-দু’ দিন পূর্বেই আদায় করে দিতেন। সহীহুল বুখারী: ১৫১১

সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা। টাকা বা অর্থের দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীরা ফিতরা আদায় করেননি। 

==== বিষয়ঃ নজর বা মানত <<<
মানত বা নযরের আভিধানিক অর্থ হল, নিজের দায়িত্বে নেয়া। যা নিজের দায়িত্ব নয় তা অপরিহার্য করে নেয়া। শরয়ী পরিভাষায় মানত বলা হয় নিজের উপর এমন কিছু আবশ্যিক করে নেয়া যা আসলে আবশ্যিক ছিল না। সেটা শর্তযুক্তও হতে পারে আবার শর্ত মুক্তও হতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا يَنْهَانَا عَنِ النَّذْرِ وَيَقُولُ " إِنَّهُ لاَ يَرُدُّ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الشَّحِيحِ "
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের মানত করতে নিষেধ করেছেন আর বলেছেন, মানত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না, তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। সহীহ মুসলিম: ৪১২৯

عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ نَهَى عَنِ النَّذْرِ وَقَالَ " إِنَّهُ لاَ يَأْتِي بِخَيْرٍ وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ "
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন আর বলেছেন, মানত কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না, বরং এর দ্বারা কেবল কৃপণ ব্যক্তি থেকে বের করা হয়। সহীহ মুসলিম: ৪১৩১

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
النَّذْرُ لاَ يُقَدِّمُ شَيْئًا وَلاَ يُؤَخِّرُهُ وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ.
মানত কোনো কিছুকে এগিয়েও দেয় না, পিছিয়েও দেয় না বরং এর দ্বারা কেবল কৃপণ ব্যক্তি থেকে সম্পদ বের করা হয়। সহীহ মুসলিম: ৪১৩০

لاَ تَنْذُرُوا فَإِنَّ النَّذْرَ لاَ يُغْنِي مِنَ الْقَدَرِ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ 
তোমরা মানত করবে না কেননা মানত তাকদীরের কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না, এটা শুধু কৃপণ থেকে সম্পদ খসায়। সহীহ মুসলিম: ৪১৩৩

إِنَّ النَّذْرَ لاَ يُقَرِّبُ مِنِ ابْنِ آدَمَ شَيْئًا لَمْ يَكُنِ اللَّهُ قَدَّرَهُ لَهُ وَلَكِنِ النَّذْرُ يُوَافِقُ الْقَدَرَ فَيُخْرَجُ بِذَلِكَ مِنَ الْبَخِيلِ مَا لَمْ يَكُنِ الْبَخِيلُ يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَ
যে বস্তু মহান আল্লাহ আদম সন্তানের জন্য নির্ধারণ করেননি মানত সেটি তার নিকটবর্তী করে না, বরং তাকদীরে যা আছে মানত সেটাই নিয়ে আসে, এর মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয় যা সে খরচ করতে চায়নি। সহীহ মুসলিম: ৪১৩৫

অতএব মানত করা ঠিক নয়। আমরা অনেকে বিপদ-আপদে পতিত হলে মানত করে থাকি। আর মনে করি এটা সওয়াবের কাজ। আল্লাহ খুশী হবেন। কিন্তু আসলে তা সওয়াবের কাজ নয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করতে নিষেধ করেছেন তাতে আল্লাহ খুশী হবেন না এবং এতে কোনো সওয়াবও হয় না। তাই আমাদের উচিত হবে কোনো অবস্থায় মানত না করা। অবশ্য মানত করে ফেললে তা পালন করতেই হবে কারণ মানত করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়।




==== বিষয়ঃ কুরবানী ===
সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তি প্রতি বছর ঈদুল আযহার সালাত আদায়ের পর কোরবানি করবে। বহু পূর্ব হতে চলে আসা বিশেষ এ ইবাদতটি উম্মতে মুহাম্মদির এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ বলেন-
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الأنْعَامِ فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِينَ
আর প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত চতুষ্পদ জন্তু তিনি রিয্ক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর; সুতরাং তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ কর আর বিনীতদেরকে সুসংবাদ দাও। আল-হাজ্জ, ২২/৩৪

>>> প্রথম কুরবানী <<<
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الآخَرِ قَالَ لأقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
আর তুমি তাদের কাছে আদমের দুই পুত্রের (হাবীল ও কাবীলের) সংবাদ যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও, যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল তখন তাদের একজনের (হাবীলের) কুরবানী কবুল হল এবং অপরজনের (কাবীলের) কুরবানী কবুল হল না। অপরজন (কাবীল) বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন (হাবীল) বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের হতে কবুল করেন’। আল-মায়িদাহ, ৫/২৭

>>> ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম এর কুরবানী <<<
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلاءُ الْمُبِينُ وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الآخِرِينَ
অতঃপর যখন সে (ঈসমাইল) তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে (ইব্‌রাহীম) বলল, ‘হে আমার পুত্র, অবশ্যই আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, তাই ভেবে দেখ তোমার অভিমত কী? সে (ঈসমাইল) বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন; যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে (ইব্‌রাহীম তার পুত্রকে) কাত করে শুইয়ে দিল, তখন আমি তাকে আহবান করে বললাম, ‘হে ইবরাহীম, নিশ্চয় স্বপ্নে দেয়া আদেশ তুমি সত্যে পরিণত করেছ, নিশ্চয় এভাবেই সৎকর্মশীলদের আমি প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আর এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে আমি তাকে মুক্ত করলাম। আর আমি তাকে পরবর্তীদের মধ্যে স্মরণীয় করে রাখলাম। আস-সাফ্ফাত, ৩৭/১০২-১০৮

>>> একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশেই কুরবানী করা <<<
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ  
অতএব তোমার রবের জন্য সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর। আল-কাউসার, ১০৮/২

قُلْ إِنَّ صَلاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
(হে নবী) তুমি বল, ‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু (সব কিছু) বিশ্বজগতের রব আল্লাহর জন্যই (নিবেদিত)’। আল-আন‘আম, ৬/১৬২

>>> কুরবানীর উদ্দেশ্য হল তাকওয়া অর্জন করা <<<
لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ
আল্লাহর কাছে এগুলোর গোশত ও রক্ত পৌঁছে না বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া, এভাবেই তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন সুতরাং মুহসিনিন (সৎকর্মশীল) দের সুসংবাদ দাও। আল-হাজ্জ, ২২/৩৭

>>> কুরবানি দেওয়া ওয়াজিব <<<
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّي.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ বছর মদিনায় অবস্থান করেছেন এবং প্রতি বছর কোরবানি করেছেন। (আত-তিরমিযী, সনদ হাসান)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا 
যে ব্যক্তির (কোরবানি করার) সামর্থ্য আছে অথচ কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছে না আসে। (সুনান ইবনে মাজাহ, সনদ হাসান)

>>> নিজেই কুরবানী করা সুন্নাত <<<
আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ,
ضَحَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ، ذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ، وَسَمَّى وَكَبَّرَ وَوَضَعَ رِجْلَهُ عَلَى صِفَاحِهِمَا.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিং-বিশিষ্ট দুটি সাদা-কালো বর্ণের দুম্বা দ্বারা কুরবানী করেন। তিনি দুম্বা দুটির পার্শ্বদেশে তাঁর কদম মুবারক স্থাপন করে “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আক্ববর” বলে নিজ হাতেই সে দু’টিকে যবাহ করেন। সহীহুল বুখারী: ৫৫৬৫, সহীহ মুসলিম

>>> কুরবানীর গোশত খাওয়া <<<
فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ
অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুস্থদেরকে, অভাবগ্রস্তদেরকে খেতে দাও। আল-হাজ্জ, ২২/২৮

>> ভাগে কুরবানী দেওয়া যায়েজ <<<
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ
আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হুদায়বিয়ার বছর একটি উট ও এক গরুতে সাতজনে শরীক হয়ে কুরবানী করেছি। সহীহ মুসলিম: ৩০৭৬

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
حَجَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَنَحَرْنَا الْبَعِيرَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ
আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জ করেছি এবং প্রত্যেক সাতজনের পক্ষ থেকে একটি করে উট বা গরু কুরবানি করেছি। সহীহ মুসলিম: ৩০৭৮



=== বিষয়ঃ কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে নফল সদাকাহ/দান ====
(সদাকাহ) صَدَقَة শব্দটি আরবী যার অর্থ দান, সদাকাহ, খায়রাত, যাকাত। সদাকাহ প্রধানত দু’প্রকার। ১. ফরজ যা অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক। ফরজ যা অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক সদাকাহগুলো হলো, (ক) যাকাত, (খ) ওশর, (গ) ফিতরা, (ঘ) নজর বা মানত, (ঙ) কোরবানি। ২. নফল صَدَقَة (সদাকাহ) বা দান, যা ইচ্ছাধীন।আমরা এই আলোচনায় শুধু নফল সদাকাহ বা নফল দান সম্পর্কে বর্ণনা করব।

>>> দান-সদাকায় রয়েছে কল্যাণ <<<
إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর তবে তা উত্তম আর যদি তোমরা তা গোপনে কর এবং তা অভাবগ্রস্তদেরকে দাও তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম এবং এর দ্বারা তিনি তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেবেন; আর যা কিছু তোমরা করছ, আল্লাহ তার খবর রাখেন। আল-বাকারাহ, ২/২৭১

أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
তারা কি জানে না যে নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং সদাকাহ গ্রহণ করেন আর নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। আত্-তাওবাহ, ৯/১০৪

রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزًّا وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلَّهِ إِلاَّ رَفَعَهُ اللَّهُ
সদাকাহ করাতে সম্পদের ঘাটতি হয় না, যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হয় তিনি তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। সহীহ মুসলিম: ৬৪৮৬

আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا
প্রতিদিন সকালে দু’জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! যে দান করলো তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধংস করে দিন। সহীহুল বুখারী: ১৪৪২

يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللَّهُ لا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ 
সুদকে আল্লাহ নির্মূল করেন আর দানকে বর্ধিত করেন আর কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে আল্লাহ ভালবাসেন না। আল-বাকারাহ, ২/২৭৬

>>> মৃত্যু আসার পূর্বেই দান-সদাকাহ করতে হবে <<<
وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلا أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِنَ الصَّالِحِينَ
আর আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছুকাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন তাহলে আমি দান-সদাকাহ করে আসতাম আর সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। আত্-তাগাবুন, ৬৩/১০

وَمِنْهُمْ مَنْ عَاهَدَ اللَّهَ لَئِنْ آتَانَا مِنْ فَضْلِهِ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُونَنَّ مِنَ الصَّالِحِينَ
আর তাদের মধ্যে কতক লোক আল্লাহর সাথে ওয়াদা করে যে, যদি আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে আমাদের দান করেন তাহলে অবশ্যই আমরা দান-সদাকাহ করব এবং অবশ্যই আমরা নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হবো। আত্-তাওবাহ, ৯/৭৫

>>> সদাকায় রয়েছে মহাপুরস্কার <<<
لا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلاحٍ بَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاةِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
অধিকাংশ গোপন পরামর্শের মধ্যে তাদের জন্য কোন কল্যাণ নেই তবে কল্যাণ আছে যে ব্যক্তি দান-সদাকাহ কিংবা ভালো কাজের অথবা মানুষের মধ্যে মীমাংসার নির্দেশ দেয় আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করবে তবে অচিরেই আমি তাকে মহাপুরস্কার দান করব। আন-নিসা, ৪/১১৪

إِنَّ الْمُصَّدِّقِينَ وَالْمُصَّدِّقَاتِ وَأَقْرَضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيمٌ
নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেয়, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান। আল-হাদীদ, ৫৭/১৮

>>> আল্লাহর দেওয়া উপমা <<<
مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হল, প্রতিটি শীষে একশ’ দানা রয়েছে আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন বাড়িয়ে দেন আর আল্লাহ প্রাচুর্য্ময়, সর্বজ্ঞ। আল-বাকারাহ, ২/২৬১ 

>>> সদাকাহ প্রদানের পর খোঁটা ও কষ্ট দিলে সাওয়াব নষ্ট হয়ে যায় <<<
الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لا يُتْبِعُونَ مَا أَنْفَقُوا مَنًّا وَلا أَذًى لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ
যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং ব্যয় করার পর অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না আর কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে পুরস্কার; এবং তাদের কোন ভয় নেই, আর তারা চিন্তিত হবে না। আল-বাকারাহ, ২/২৬২

قَوْلٌ مَعْرُوفٌ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِنْ صَدَقَةٍ يَتْبَعُهَا أَذًى وَاللَّهُ غَنِيٌّ حَلِيمٌ
যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে উত্তম কথা ও ক্ষমা উৎকৃষ্ট এবং আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল। আল-বাকারাহ, ২/২৬৩

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالأذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا لا يَقْدِرُونَ عَلَى شَيْءٍ مِمَّا كَسَبُوا وَاللَّهُ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
হে মুমিনগণ, তোমরা (সদাকাহ প্রদানের পর) খোঁটা ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদাকাহসমূহকে বাতিল করো না, সেই ব্যক্তির ন্যায়, যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে অথচ সে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে না, অতএব তার দৃষ্টান্ত এমন একটি মসৃণ পাথরের ন্যায় যার উপর কিছু মাটি রয়েছে অতঃপর প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে তাকে পরিষ্কার করে ফেলল, তা হতে তারা যা অর্জন করেছে এক্ষেত্রে তারা সুফল পাবে না আর আল্লাহ অবিশ্বাসী লোকদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। আল-বাকারাহ, ২/২৬৪

>>> গোপনে সদাকাহ করাই উত্তম <<<
রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ إِمَامٌ عَدْلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ
সাত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়াতলে ছায়া দিবেন যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। ১। ন্যায়পরায়ণ শাসক। ২। যে যুবক আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থেকে যৌবনে উপনীত হয়েছে। ৩। যার অন্তরের সম্পর্ক থাকে সর্বদা মাসজিদের সাথে। ৪। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে দু‘ব্যক্তি পরস্পর মহব্বত রাখে, উভয়ে একত্রিত হয় সেই মহব্বতের উপর আর পৃথক হয় সেই মহব্বতের উপর। ৫। এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য) আহবান জানিয়েছে; তখন সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। ৬। এমন ব্যক্তি যে গোপনে এমনভাবে সদাকাহ করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না। ৭। এমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাতে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ থেকে অশ্রু বের হয়ে পড়ে। সহীহুল বুখারী: ৬৬০, ১৪২৩, ৬৮০৬, সহীহ মুসলিম: ২২৭০

>>> উত্তম সদাহাহ কোনটি? <<>
আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ الصَّدَقَةِ أَعْظَمُ فَقَالَ  "أَنْ تَصَدَّقَوَأَنْتَ صَحِيحٌ شَحِيحٌ تَخْشَى الْفَقْرَ وَتَأْمُلُ الْغِنَى وَلاَ تُمْهِلْ حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ قُلْتَ لِفُلاَنٍ كَذَا وَلِفُلاَنٍ كَذَا أَلاَ وَقَدْ كَانَ لِفُلاَنٍ" 
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! উত্তম সদাকাহ কোন্‌টি? তিনি বললেন, অর্থের প্রতি লোভ থাকাকালে সুস্থ অবস্থায় তোমার সদাকাহ করা, যখন তুমি দারিদ্রের ভয় কর এবং ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা রাখ; আর সদাকাহ করতে দেরী করবে না, যখন তোমার প্রাণ কন্ঠনালীতে এসে যায় তখন যেন বলতে না হয় যে, অমুকের জন্য এ পরিমাণ এবং অমুকের জন্য এ পরিমান, জেনে রাখ, তখন এ সম্পদ তো অমুকের হয়েই গেছে। সহীহুল বুখারী: ১৪১৯, ২৭৪৮, সহীহ মুসলিম: ২২৭২

>>> প্রত্যেক ব্যক্তিকে সদাকাহ করতে হবে <<<
রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
" عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ صَدَقَةٌ ". فَقَالُوا يَا نَبِيَّ اللَّهِ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ قَالَ " يَعْمَلُ بِيَدِهِ فَيَنْفَعُ نَفْسَهُ وَيَتَصَدَّقُ ". قَالُوا فَإِنْ لَمْ يَجِدْ قَالَ " يُعِينُ ذَا الْحَاجَةِ الْمَلْهُوفَ ". قَالُوا فَإِنْ لَمْ يَجِدْ. قَالَ " فَلْيَعْمَلْ بِالْمَعْرُوفِ، وَلْيُمْسِكْ عَنِ الشَّرِّ فَإِنَّهَا لَهُ صَدَقَةٌ ".
প্রত্যেক মুসলিমকে সদাকাহ করা উচিত, সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া নবীয়াল্লাহ! কেউ যদি সদাকাহ দেওয়ার মত কিছু না পায়? উত্তরে তিনি বললেন সে ব্যক্তি নিজ হাতে কাজ করবে এতে নিজেও উপকৃত হবে, সদাকাহও করবে। তারা বললেন, যদি এরও সামর্থ্য না থাকে? তিনি উত্তর দিলেনঃ কোন বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে। তারা বললেনঃ যদি এতটুকুরও সামর্থ্য না থাকে? তিনি উত্তর দিলেনঃ এ অবস্থায় সে যেন নেক আমল করে এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। এটা তার জন্য সদাকাহ বলে গণ্য হবে। সহীহুল বুখারী: ১৪৪৫, ৬০২২, সহীহ মুসলিম: ২২২৩

>>> একটি খেজুর দ্বারা হলেও সদাকাহ করা <<<
আদী ইবনু হাতিম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,
اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ
তোমরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর এক টুকরা খেজুর সাদকা করে হলেও। সহীহুল বুখারী: ১৪১৭

রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَصْعَدُ إِلَى اللَّهِ إِلاَّ الطَّيِّبُ، فَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ، حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ "
যে ব্যক্তি তার হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণও দান করে, মহান আল্লাহ তাঁর ডান হাত দ্বারা তা কবুল করেন আর পবিত্র ও হালাল জিনিস ছাড়া আল্লাহর দিকে কোন কিছু অগ্রগমন করতে পারে না। তারপর এটি তার মালিকের জন্য লালন-পালন ও দেখাশোনা করতে থাকে, তোমরা যেমন ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন পালন করতে থাক, পরিশেষে তা পাহাড়ের ন্যায় বিরাট আকার ধারণ করে। সহীহুল বুখারী: ১৪১০, ৭৪৩০, সহীহ মুসলিম: ২২৩২

>>> ভাল কথা হচ্ছে সদাকাহ <<<
রাসূলাল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
كُلُّ سُلَامَى مِنْ النَّاسِ عَلَيْهِ صَدَقَةٌ، كُلَّ يَوْمٍ تَطْلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ تَعْدِلُ بَيْنَ اثْنَيْنِ صَدَقَةٌ، وَتُعِينُ الرَّجُلَ فِي دَابَّتِهِ فَتَحْمِلُهُ عَلَيْهَا أَوْ تَرْفَعُ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُصَدَقَةٌ، وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وَبِكُلِّ خُطْوَةٍ تَمْشِيهَا إلَى الصَّلَاةِ صَدَقَةٌ، وَتُمِيطُ الْأَذَى عَنْ الطَّرِيقِ صَدَقَةٌ
"প্রত্যহ যখন সূর্য উঠে মানুষের (শরীরের) প্রত্যেক গ্রন্থির সদাকাহ দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। দু'জন মানুষের মাঝে ইনসাফ করা হচ্ছে সদাকাহ, কোন আরোহীকে তার বাহনের উপর আরোহণ করতে বা তার উপর বোঝা উঠাতে সাহায্য করা হচ্ছে সদাকাহ, ভাল কথা হচ্ছে সদাকাহ, স্বলাতের জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপ হচ্ছে সদাকাহ এবং কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরানো হচ্ছে সদাকাহ।" সহীহুল বুখারী: ২৯৮৯, সহীহ মুসলিম: ২২২৫

>>> নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও হচ্ছে সদাকাহ <<<
আবু যার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالُوا لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالأُجُورِ يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُولِ أَمْوَالِهِمْ . قَالَ " أَوَلَيْسَ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ مَا تَصَّدَّقُونَ إِنَّ بِكُلِّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةً وَكُلِّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ قَالَ " أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ " .
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের কয়েকজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! বিত্তবানরা সাওয়াব নিয়ে যাচ্ছে, তারা আমাদের মত স্বলাত আদায় করে, আমাদের মত সওম পালন করে এবং তারা নিজেদের ধন সম্পদ হতে কিছু দান করে থাকে। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য কি মহান আল্লাহ সদাকাহ করার ব্যবস্থা করেননি? প্রতিটি তাসবীহ সদাকাহ, প্রতিটি তাকবীর সদাকাহ, প্রতিটি তাহমীদ সদাকাহ, প্রতিটি তাহলীল সদাকাহ, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজ হতে বিরত রাখা হচ্ছে সদাকাহ এবং তোমাদের প্রত্যেকে নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও হচ্ছে সদকাহ্। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ যদি স্ত্রী সংগম করে এতেও কি সে সাওয়াব পাবে? তিনি বললেন, তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার পাপ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সাওয়াব পাবে। সহীহ মুসলিম: ২২১৯

>>> গাছ লাগানো সদাকাহ <<<
রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا إِلاَّ كَانَ مَا أُكِلَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا سُرِقَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ مِنْهُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ وَمَا أَكَلَتِ الطَّيْرُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةً وَلاَ يَرْزَؤُهُ أَحَدٌ إِلاَّ كَانَ لَهُ صَدَقَةٌ
কোন মুসলিম ফলবান গাছ লাগায় আর তা থেকে যা কিছু খাওয়া হবে তা তার জন্য সদাকাহ, তা থেকে যা কিছু চুরি হবে তাও তার জন্য সদাকাহ, চতুষ্পদ হিংস্র জানোয়ার যা খাবে তাও তার জন্য সদাকাহ, পাখী যা খাবে তাও তার জন্য সদাকাহ এবং যে কেউ তা থেকে কিছু নেবে সেটাও তার জন্য সদাকাহ। সহীহ মুসলিম: ৩৮৬০

রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا، أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا، فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيمَةٌ، إِلاَّ كَانَ لَهُ بِهِ صَدَقَةٌ
কোন মুসলিম ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা থেকে পাখী কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ থেকে সদাকাহ বলে গণ্য হবে। সহীহুল বুখারী: ৬০১২, ২৩২০, সহীহ মুসলিম: ৩৮৬৫

জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَى أُمِّ مُبَشِّرٍ الأَنْصَارِيَّةِ فِي نَخْلٍ لَهَا فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " مَنْ غَرَسَ هَذَا النَّخْلَ أَمُسْلِمٌ أَمْ كَافِرٌ " . فَقَالَتْ بَلْ مُسْلِمٌ . فَقَالَ " لاَ يَغْرِسُ مُسْلِمٌ غَرْسًا وَلاَ يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلَ مِنْهُ إِنْسَانٌ وَلاَ دَابَّةٌ وَلاَ شَىْءٌ إِلاَّ كَانَتْ لَهُ صَدَقَةٌ " .
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  উম্মে মুবাশশির নাম্নী এক আনসারী মহিলার খেজুর বাগানে প্রবেশ করেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বাগানটি কে লাগিয়েছে, কোন মুসলিম নাকি কোন কাফের? সে বলল,বরং একজন মুসলিম লাগিয়েছে। তিনি বললেন, কোন মুসলিম যখন কোন ফলবান গাছ লাগায় কিংবা কোন ক্ষেত চাষাবাদ করে আর তা থেকে কোন মানুষ কিংবা কোন চতুষ্পদ জন্তু কিংবা অন্য কোন কিছুতে খায়, তা তার জন্য সদাহাহ হিসাবে গণ্য হবে। সহীহ মুসলিম: ৩৮৬১

>>> মেহমানদারী করা হচ্ছে সদাকাহ <<<
আবূ সূরাইয়া আদাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
سَمِعَتْ أُذُنَاىَ، وَأَبْصَرَتْ، عَيْنَاىَ حِينَ تَكَلَّمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ ". قَالَ وَمَا جَائِزَتُهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ وَالضِّيَافَةُ ثَلاَثَةُ أَيَّامٍ، فَمَا كَانَ وَرَاءَ ذَلِكَ فَهْوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ ".
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বলেছিলেন তখন আমার দু-কান তা শুনছিলো ও আমার দু-চোখ (তাঁকে) দেখছিলো। তিনি বলেছিলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে তার প্রাপ্যের ব্যাপারে। জিজ্ঞেস করা হল ইয়া রাসুলাল্লাহ! মেহমানের প্রাপ্য কী তিনি বলেন, একদিন একরাত ভালরূপে মেহমানদারী পাওয়া। আর তিন দিন হল (সাধারণ) মেহমানদারী আর তার চেয়েও বেশী হলে তা তার জন্য সদাকাহ স্বরূপ। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা নীরব থাকে। সহীহুল বুখারী: ৬০১৯, ৬১৩৫, ৬৪৭৬; সহীহ মুসলিম : ৪৪০৫

>>> মৃত ব্যক্তির পক্ষে সদাকাহ করা <<<
আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
أَنَّ رَجُلاً، أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّيَ افْتُلِتَتْ نَفْسَهَا وَلَمْ تُوصِ وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ أَفَلَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا قَالَ  " نَعَمْ ".
এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মা হঠাৎ মৃত্যু বরণ করেছেন। তিনি অসিয়্ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয়, যদি তিনি কথা বলতে পারতেন, তাহলে সদাকাহ করতেন। আমি যদি তার পক্ষ হতে সদাকাহ করি তবে এর সাওয়াব তিনি পাবেন কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ, পাবেন। সহীহুল বুখারী: ১৩৮৮, ২৭৬০, সহীহ মুসলিম: ২২১৬, ৪১১২, ৪১১৩

ইবনু আববাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ ـ رضى الله عنه ـ تُوُفِّيَتْ أُمُّهُ وَهْوَ غَائِبٌ عَنْهَا، فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي تُوُفِّيَتْ وَأَنَا غَائِبٌ عَنْهَا، أَيَنْفَعُهَا شَىْءٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَنْهَا قَالَ  " نَعَمْ ". قَالَ فَإِنِّي أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطِي الْمِخْرَافَ صَدَقَةٌ عَلَيْهَا.
সা‘দ ইবনু ‘উবাদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর মা মারা গেলেন এবং তিনি সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন তারপর সা‘দ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে মারা গেছেন, আমি যদি তার পক্ষ থেকে কিছু সদাকাহ করি, তাহলে কি তা তাঁর কোন উপকারে আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘তাহলে আমি আপনাকে সাক্ষী করছি আমার মিকরাফ নামক বাগানটি তাঁর জন্য সদাকাহ করলাম। সহীহুল বুখারী: ২৭৫৬, ২৭৬২

সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত মৃত্যু আসার পূর্বেই হালাল উপার্জন থেকে সদাকাহ করা। যাতে হঠাৎ মৃত্যু চলে এলে, আফসোস করতে না হয় আর যেন বলতে না হয়, “হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছুকাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন তাহলে আমি দান-সদাকাহ করে আসতাম; (আত্-তাগাবুন, ১০) আর সাথে সাথে আমাদেরকে সদাকায়ে জারিয়ার আমলও করা উচিত। কারণ রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَشْيَاءَ : مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ 
‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায় তবে তিনটি আমল অব্যাহত থাকে, ১) সদাকায়ে জারিয়া কিংবা ২) উপকারী ইলম কিংবা ৩) নেক-সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে।’ সহীহ মুসলিম: ৪১১৫

তাই আমাদেরকে পরকালের নাজাতের জন্য বেশি বেশি সদাকাহ করা উচিত। আমাদেরকে যেন আল্লাহ বেশি বেশি সদাকাহ করার তাওফীক দান করেন, আমিন।



=== বিষয়ঃ কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে রিবা/সুদ ===
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لا يَقُومُونَ إِلا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَى فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ 
যারা সুদ ভক্ষণ করে, তারা শয়তানের স্পর্শে মোহাবিষ্ট ব্যক্তির দন্ডায়মান হওয়ার অনুরূপ ব্যতীত দন্ডায়মান হবে না; এটা এ জন্য যে তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতই। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন; সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার ফলে সে বিরত হল, অতীতে যা হয়ে গেছে তা তারই জন্য, আর তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল, আর যারা পুনরাবৃত্তি করবে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল-বাকারাহ, ২/২৭৫

يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللَّهُ لا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ 
সুদকে আল্লাহ নির্মূল করেন আর দানকে বর্ধিত করেন আর  আল্লাহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না। আল-বাকারাহ, ২/২৭৬

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لا تَظْلِمُونَ وَلا تُظْلَمُونَ وَإِنْ كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَى مَيْسَرَةٍ وَأَنْ تَصَدَّقُوا خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لا يُظْلَمُونَ 
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা বকেয়া রয়েছে তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না ছাড় তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও, আর যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে, তোমরা যুলুম করবে না আর তোমাদের উপর যুলুম করা হবে না। আর যদি সে (ঋণ গ্রহীতা) অভাবগ্রস্ত হয়, তবে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও, আর যদি তোমরা দান করে দাও, তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে। আর ঐ দিনকে ভয় কর, যে দিন তোমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে; তারপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে সে যা উপার্জন করেছে তা পুরোপুরি দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোন জুলুম করা হবে না। আল-বাকারাহ, ২/২৭৮-২৮১

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُضَاعَفَةً وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ وَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ 
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ ভক্ষণ করো না আর আল্লাহকে ভয় কর যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। এবং তোমরা সেই আগুন হতে বেঁচে থাক যা কাফেরদের জন্য তৈরী করা হয়েছে। আলে‘ইমরান, ৩/১৩০-১৩১

>>> ইহুদি ধর্মে রিবা/সুদ <<<
فَبِظُلْمٍ مِنَ الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ كَثِيرًا وَأَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُوا عَنْهُ وَأَكْلِهِمْ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ مِنْهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا 
অতএব যারা ইহুদী তাদের জুলুমের কারণে পবিত্র বস্তুগুলোকেও তাদের উপর আমরা হারাম করেছিলাম যা পূর্বে তাদের জন্য হালাল করা হয়েছিল এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে তাদের বাধা দানের কারণে। আর তাদের রিবা (সুদ) গ্রহণের কারণেও অথচ তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং তারা অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করতো আর আমি তাদের মধ্যে কাফেরদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। আন-নিসা, ৪/১৬০-১৬১ 

وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ رِبًا لِيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلا يَرْبُو عِنْدَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ 
আর তোমরা রিবায় (সুদে) যা কিছু দিয়ে থাক, যেন তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়, আসলে আল্লাহর নিকটে তা বৃদ্ধি পায় না, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাক প্রকৃতপক্ষে তারাই বহুগুণ সম্পদপ্রাপ্ত। আর-রূম, ৩০/৩৯

>>> হাদীসের আলোকে রিবা/সুদ <<<
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ .
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন, সুদ গ্রহীতার উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও এর সাক্ষীদ্বয়ের উপর এবং বলেছেন এরা অপরাধের ক্ষেত্রে সকলেই সমান। সহীহ মুসলিম: ৩৯৮৫

রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
لَعَنَ الْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ، وَآكِلَ الرِّبَا، وَمُوكِلَهُ، وَلَعَنَ الْمُصَوِّرَ.
সুদখোর ও সুদ-দাতার উপর এবং (জীবের) ছবি অংকনকারীর উপর লানত করেছেন। সহীহুল বুখারী: ২২৩৮, ৫৯৬২, ৫৩৪৭

রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لاَ يُبَالِي الْمَرْءُ بِمَا أَخَذَ الْمَالَ، أَمِنْ حَلاَلٍ أَمْ مِنْ حَرَامٍ ".
মানুষের উপর এমন এক যুগ অবশ্যই আসবে যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে কিভাবে সে মাল অর্জন করল, হালাল থেকে নাকি হারাম থেকে। সহীহুল বুখারী: ২০৮৩

রাসূল সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
الشِّرْكُ بِاللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ 
সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা।(২) যাদু করা (৩) আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়তসম্মতপন্থা ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল প্রকৃতির সতী মুমিন নারীদের অপবাদ দেওয়া। সহীহুল বুখারী: ২৭৬৬, ৬৮৫৭ সহীহ মুসলিম: ১৬৩

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
 إِنَّمَا الرِّبَا فِي النَّسِيئَةِ 
সুদ কেবল বাকীতে হয়।  সহীহ মুসলিম: ৩৯৮১, ৩৯৮৩, ৩৯৮০

 لاَ رِبًا فِيمَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ 
নগদ বিক্রিতে সুদ নেই। সহীহ মুসলিম: ৩৯৮২

রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
رَأَيْتُ اللَّيْلَةَ رَجُلَيْنِ أَتَيَانِي، فَأَخْرَجَانِي إِلَى أَرْضٍ مُقَدَّسَةٍ، فَانْطَلَقْنَا حَتَّى أَتَيْنَا عَلَى نَهَرٍ مِنْ دَمٍ فِيهِ رَجُلٌ قَائِمٌ، وَعَلَى وَسَطِ النَّهْرِ رَجُلٌ بَيْنَ يَدَيْهِ حِجَارَةٌ، فَأَقْبَلَ الرَّجُلُ الَّذِي فِي النَّهَرِ فَإِذَا أَرَادَ الرَّجُلُ أَنْ يَخْرُجَ رَمَى الرَّجُلُ بِحَجَرٍ فِي فِيهِ فَرَدَّهُ حَيْثُ كَانَ، فَجَعَلَ كُلَّمَا جَاءَ لِيَخْرُجَ رَمَى فِي فِيهِ بِحَجَرٍ، فَيَرْجِعُ كَمَا كَانَ، فَقُلْتُ مَا هَذَا فَقَالَ الَّذِي رَأَيْتَهُ فِي النَّهَرِ آكِلُ الرِّبَا 
আজ রাতে আমি স্বপ্ন দেখেছি যে, দু’ব্যক্তি আমার নিকট এসে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায়, তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খন্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ কে? সে বলল, যাকে আপনি (রক্তের)  নদীতে দেখেছেন, সে হল সুদখোর। সহীহুল বুখারী: ২০৮৫

রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
সূদের (পাপের) সত্তরটি স্তর রয়েছে, যার নিম্নতম স্তর হল মায়ের সাথে যেনা করার পাপ। ইবনে মাজাহ

কোন ব্যক্তি যদি এক দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) রিবা বা সূদ জ্ঞাতসারে গ্রহণ করে, তাতে তার পাপ ছত্রিশ বার ব্যভিচার করার চেয়েও অনেক বেশী হয়। মুসনাদে আহমদ

সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হল নিঃস্বতা। ইবনে মাজাহ

কিয়ামতের পুর্বে সূদ, যেনা এবং মাদকদ্রব্য ব্যাপকভাবে প্রকাশ পাবে। ত্বাবারাণী

কুরআনের আয়াত ও হাদীছসমূহ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় সূদ ইসলামে সম্পুর্ণরূপে হারাম এবং এর শেষ পরিণতি নিঃস্বতা। তাই কম হোক বেশী হোক সকল প্রকার সূদ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা একান্ত যরূরী।

তথ্যসূত্র :
বই: ওয়াহীর জ্ঞান। সংকলন: মোহাম্মদ সাইদুর রহমান; সম্পাদনা: অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক; প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স। ।
ওয়াহীর জ্ঞান ১৬ পর্ব
ওয়াহীর জ্ঞান ১৬ পর্ব

Price : *Happy Shopping
Order via whatsapp Order via Email

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Content copy is disabled! Default text copied.