ওয়াহীর জ্ঞান ১৫ পর্ব
ষোড়শ অধ্যায়ঃ
=========•সুন্নাহ ও হাদীস।
=============
•কুরআনের আয়াতে ﺳُﻨَّﺔ [সুন্নাহ] ও ]তান্নুস[ ﺳُﻨَّﺖ
হাদীছ শব্দ দ্বারা কুরআনকেও বুঝানো হয়েছে।
•আস্-সালাফ আস্-সালেহীন এর মানহাজ।
•আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত।
।
=== বিষয়ঃ আমাদেরকে রাসূলের সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে ===
আহল অর্থ অনুসারী এবং [সুন্নাহ] سُنَّة অর্থ রীতি, নিয়ম, পথ, পন্থা ও পদ্ধতি। যে পথ, পন্থা, রীতি ও আদর্শ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবলম্বন করতেন তাই সুন্নাহ। আর যে ব্যক্তি রাসূলের সুন্নাহ অনুসরণ করে তাকে আহলুস্ সুন্নাহ বলা হয়। কুরআনে রাসূলের সর্বোত্তম আদর্শ বলতে সুন্নাহকেই বুঝানো হয়েছে। মুমিন জীবনের একমাত্র আদর্শ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর রাসূলের জীবনীর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আল্লাহর রাসূলই একজন মুমিনের অনুকরণীয় আদর্শ। আল্লাহ বলেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও আখিরাত প্রত্যাশা করে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। আল-আহযাব, ৩৩/২১
وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ
আর (হে নবী) অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। আল-ক্বালাম, ৬৮/৪।
>>> সুন্নাহ হল এক প্রকার ওয়াহী <<<
ওয়াহী দু’প্রকারঃ এক- ওয়াহী মাতলু দুই- ওয়াহী গাইরে মাতলু। ওয়াহী মাতলু হল, কুরআন মাজীদ আর ওয়াহী গায়রে মাতলু হল সুন্নাহ বা হাদীস। সূন্নাহ বা হাদীস ও আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত ওয়াহী। আল্লাহ বলেন-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلا وَحْيٌ يُوحَى
আর সে (রাসূল) মনগড়া কথা বলে না। তা কেবল ওয়াহী, যা প্রত্যাদেশ করা হয়। আন্-নাজ্ম, ৫৩/৩-৪
>>> সুন্নাহ হল কুরআনের ব্যাখ্যা <<<
সূন্নাহ হল কুরআনের ব্যাখ্যা। সূন্নাহ বাদ দিয়ে কুরআনের উপর আ‘মাল করা বা কুরআন বুঝা সম্ভব নয়। যেমন, স্বলাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ইত্যাদি আদেশ কুরআনে দেয়া হয়েছে কিন্তু স্বলাত কিভাবে আদায় করতে হবে এবং যাকাত কী পরিমাণ আদায় করতে হবে, কোন্ সম্পদের যাকাত দিতে হবে এবং কোন্ সম্পদের যাকাত দিতে হবে না তার বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি। এ সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা সূন্নাহ বা হাদিসেই করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ দিয়ে এবং আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি উপদেশ (কুরআন) যেন তুমি মানুষকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিতে পার, যা তাদের নিকট অবতীর্ণ করা হয়েছে আর হয়ত তারা চিন্তা-ভাবনা করবে। আন্-নাহ্ল, ১৬/৪৪
وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি, শুধু এ কারণে, যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে, তা তাদের জন্য তুমি স্পষ্ট করে দেবে এবং (এটি) হিদায়াত ও রহমত সেই লোকদের জন্য যারা ঈমান আনে। আন্-নাহ্ল, ১৬/৬৪
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার স্বজাতির ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারে, সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান; আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ইবরাহীম ১৪/৪
আল্লাহ প্রত্যেক রাসূলের উপর তার নিজ ভাষায় কিতাব নাযিল করেছেন যাতে রাসূলগণ ব্যাখ্যা করে জনগণকে ভালভাবে বুঝাতে পারেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন সুন্নাহ বা হাদিসের মাধ্যমে। যদিও হাদিসের মধ্যে রাসূলের নামে অনেক মিথ্যা কথাই বিদ্যমান। কিন্তু সম্মানিত মুহাদ্দিসগণ কোন্টি রাসূলের হাদীস আর কোন্টি রাসূলের হাদীস নয়, তা পৃথক করেছেন। জঈফ ও জাল বা মিথ্যা হাদীস অবশ্যই বর্জন করতে হবে, যা রাসূলের নামে মিথ্যুকরা চালিয়ে দিয়েছে। আমরা কেবল সহীহ ও হাসান হাদীসই গ্রহণ করব। যদি কখনো কোন জঈফ হাদীস উল্লেখ করতে হয়, তবে স্পষ্ট করে দিতে হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন-
تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّتِيْ
আমি তোমাদের মাঝে দুটি বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এ দুটিকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে কক্ষনো পথভ্রষ্ট হবে না। বস্তু দুটি হলঃ আল্লাহর কিতাব (তথা আল-কুরআন) এবং আমার সুন্নাত (তথা হাদীছ)। [হাকেম: ১/১৭২, ৩১৯, বায়হাক্বী: ১০/১১৪, ২০৮৩, মালেক: ১৫৯৪, হাদীছ বিশুদ্ধ। আলবানীর ছহীহুল জামে‘য়া ২৯৩৭, ৩২৩২]
>>> সুন্নাহ বা হাদীস হল হিকমাহ (প্রজ্ঞা) <<<
আল্লাহ কুরআনে সূন্নাহকে হিকমাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ বলেন-
وَأَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ
আর আল্লাহ তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন কিতাব ও হিকমাত (সুন্নাহ) এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আন-নিসা, ৪/১১৩
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে তাদের কাছে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত (সুন্নাহ) শিক্ষা দেয়। আলে‘ইমরান, ৩/১৬৪
وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ وَالْحِكْمَةِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا
আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর যে আয়াতসমূহ ও হিকমাত (সুন্নাহ) পঠিত হয়- তা তোমরা স্মরণ রেখো; নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষদর্শী ও সর্ব বিষয়ে অবহিত। আল-আহযাব, ৩৩/৩৪
আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ কুরআনের কথা বলেছেন, আবার হিকমাহ অর্থাৎ সূন্নাহর কথাও বলেছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, সুন্নাহও আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিলকৃত ওয়াহী। সুতরাং কুরআন যেমন আল্লাহর ওয়াহী, অনুরূপভাবে সূন্নাহও আল্লাহর ওয়াহী। অনেক বিদ্বান বলেছেন- হিকমাহ হল সুন্নাহ বা হাদীস। কেননা কুরআন ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের গৃহে যা পাঠ করা হত, তা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
"أَلَا إِنِّيْ أُوْتِيْتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ"
জেনে রেখ! আমাকে কিতাব (কুরআন) ও তার সঙ্গে অনুরূপ কিতাব (হাদীস) দেওয়া হয়েছে। [আহমদ: ১৭১৭৪ আবূ দাউদ: ৪৬০৪]
>>> সুন্নাহর অনুসরণ করার মধ্যেই নাজাত ও মুক্তি <<<
সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা ছাড়া নাজাত বা মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়। আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى» ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ: «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى
আমার প্রত্যেক উম্মাত জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে সে ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হল, কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই (জান্নাতে প্রবেশ করতে) অস্বীকার করল। [সহীহুল বুখারী: ৭২৮০]
সুন্নাহ ছাড়া আমল পরিত্যাজ্য আর তা হবে বিদআত এবং বিদআত হল ভ্রষ্টতা আর ভ্রষ্টতা হল জাহান্নামে যাবার পথ
আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رد
যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। সহীহুল বুখারী: ২৬৯৭ সহিহ মুসলিম: ৪৩৮৪
জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
অতঃপর অবশ্যই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আর সর্বোচ্চ পথ হচ্ছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পথ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল দীনে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা। এরূপ সব নতুন জিনিসই গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)। সহীহ মুসলিম: ১৮৯০
জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ، وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ
আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল দীনের মধ্যে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা আর সকল নতুন জিনিসই বিদআত আর সকল বিদআত-ই-গুমরাহী (পথভ্রষ্ট) আর সকল গুমরাহীর (পথভ্রষ্ট) পরিণাম জাহান্নাম। [নাসায়ী: ১৫৭৮]
সুতরাং ভাল আমল বিশুদ্ধ নিয়তে করলেও কোনই লাভ হবে না যতক্ষণ রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহীহ সুন্নাত অনুযায়ী না হবে। যদি আমলের মধ্যে বিদআত থাকে তাহলে তার পরিণাম হবে জাহান্নাম।
=== বিষয়ঃ কুরআনের আয়াতে سُنَّة [সুন্নাহ] ও سُنَّت [সুন্নাত] <<<
[সুন্নাহ] سُنَّة এর শাব্দিক অর্থ রীতি, নিয়ম, নীতি, বিধান, পথ, পন্থা; তা উৎকৃষ্ট হোক কিংবা নিকৃষ্ট হোক।
>>> আল্লাহর নীতিতে কোন পরিবর্তন হয় না <<<
سُنَّةَ مَنْ قَدْ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنْ رُسُلِنَا وَلا تَجِدُ لِسُنَّتِنَا تَحْوِيلا
(হে নবী) তোমার পূর্বে আমার রাসূলদের মধ্যে যাদেরকে আমি পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও ছিল এরূপ নিয়ম আর তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন দেখতে পাবে না। আল-ইস্রা, ১৭/৭৭
سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلا
ইতঃপূর্বে যারা অতিবাহিত হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রেও এটাই ছিল আল্লাহর রীতি আর তুমি আল্লাহর রীতিতে কক্ষনো কোন পরিবর্তন পাবে না। আল-আহযাব, ৩৩/৬২
سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلُ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلا
ইহাই আল্লাহর নীতি; তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদের ব্যাপারেও; আর তুমি আল্লাহর নীতিতে কক্ষনো কোন পরিবর্তন পাবে না। আল-ফাত্হ, ৪৮/২৩
مَا كَانَ عَلَى النَّبِيِّ مِنْ حَرَجٍ فِيمَا فَرَضَ اللَّهُ لَهُ سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ قَدَرًا مَقْدُورًا
আল্লাহ নবীর জন্য যা বিধিবদ্ধ করেছেন তার জন্য তা করতে কোন বাধা নেই, পূর্বে যে সকল নবী অতীত হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রেও এটাই ছিল আল্লাহর বিধান, আল্লাহর বিধান সুনির্ধারিত, চূড়ান্ত। আল-আহযাব, ৩৩/৩৮
اسْتِكْبَارًا فِي الأرْضِ وَمَكْرَ السَّيِّئِ وَلا يَحِيقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ إِلا بِأَهْلِهِ فَهَلْ يَنْظُرُونَ إِلا سُنَّةَ الأوَّلِينَ فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلا وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَحْوِيلا
জমিনে উদ্ধত আচরণ আর কূটচক্রান্ত; কিন্তু কূটচক্রান্ত তাকেই ঘিরে ধরবে যে তা করবে; তবে কি তারা পূর্ববর্তীদের উপর (আল্লাহর পক্ষ থেকে) বিধানের অপেক্ষা করছে? কিন্তু তুমি আল্লাহর বিধানের কক্ষনো কোন পরিবর্তন পাবে না এবং তুমি আল্লাহর বিধানের কক্ষনো কোন ব্যতিক্রম পাবে না। ফাত্বির, ৩৫/৪৩
>>> মানুষের অনেকে কুরআনের প্রতি ঈমান না এনে পূর্ববর্তীদের নিয়ম-নীতিতে চলে <<<
لا يُؤْمِنُونَ بِهِ وَقَدْ خَلَتْ سُنَّةُ الأوَّلِينَ
তারা এতে (কুরআনে) ঈমান আনবে না, আর পূর্ববর্তী লোকদেরও এ নিয়ম-নীতি চলে এসেছে। আল-হিজর, ১৫/১৩
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَنْ يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَى وَيَسْتَغْفِرُوا رَبَّهُمْ إِلا أَنْ تَأْتِيَهُمْ سُنَّةُ الأوَّلِينَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ قُبُلا
আর যখন মানুষের নিকট হিদায়াত এসেছে, তখন তাদেরকে ঈমান আনতে কিংবা তাদের রবের কাছে ক্ষমা চাইতে বিরত রেখেছে কেবল এ বিষয়টিই যে, পূর্ববর্তীদের রীতি তাদের উপর পুনরায় নেমে আসবে কিংবা তাদের উপর আযাব সরাসরি এসে উপস্থিত হবে। আল-কাহাফ, ১৮/৫৫
قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنْتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ وَإِنْ يَعُودُوا فَقَدْ مَضَتْ سُنَّةُ الأوَّلِينَ
যারা কুফরী করেছে তুমি তাদেরকে বলে দাও, যদি তারা বিরত হয় তাহলে অতীতে যা অপরাধ হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে আর যদি তারা পুনরাবৃত্তি করে তাহলে পূর্ববর্তীদের (ক্ষেত্রে আল্লাহর) রীতি তো গত হয়েছে। আল-আনফাল, ৮/৩৮
>>> আল্লাহর আযাব দেখার পর ঈমান গ্রহণ কোন কাজে আসবে না <<<
فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ إِيمَانُهُمْ لَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ فِي عِبَادِهِ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْكَافِرُونَ
অতঃপর যখন তারা আমার আযাব প্রত্যক্ষ করল তখন তাদের ঈমান গ্রহণ তাদের কোন উপকারে আসল না; এটা আল্লাহর বিধান, তাঁর বান্দাদের মধ্যে পূর্ব হতে চলে আসছে আর সেই ক্ষেত্রে কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আল-মুমিন, ৪০/৮৫
=== বিষয়ঃ হাদীছ শব্দ দ্বারা কুরআনকেও বুঝানো হয়েছে ===
>>> আহলে হাদীস মানে কী? <<<
সুন্নাহর অপর নাম হাদিছ। আহল অর্থ অনুসারী এবং হাদীছ (حَدِيث) এর শাব্দিক অর্থ হল কথা, বাণী, কথাবার্তা, আলোচনা, কথিকা, সংবাদ, খবর, কাহিনী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা, কর্ম, সম্মতি, চারিত্রিক গুণবলীকে হাদীস বলা হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হাদীছ (কুরআন) ও রাসূলের হাদীছ (সহীহ হাদীছ) অনুসরণ করে তাকে আহলুল হাদীছ বলা হয়।
>>> কুরআন হল সর্বোত্তম হাদীস <<<
কারণ হাদীছ শব্দ দ্বারা কুরআনকেও বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন সর্বোত্তম (হাদীস) বাণী সম্বলিত সামঞ্জস্য পূর্ণ একটি কিতাব যা পুনরাবৃত্তি করা হয়, যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের গা এতে শিউরে ওঠে তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণের প্রতি বিনম্র হয়ে যায়; এটিই আল্লাহর হেদায়াত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হেদায়াত দান করেন আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথ প্রদর্শক নেই। আয-যুমার, ৩৯/২৩
>>> আল্লাহর হাদীস অধিক সত্যবাদী <<<
اللَّهُ لا إِلَهَ إِلا هُوَ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لا رَيْبَ فِيهِ وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثًا
আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই, অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে, এতে কোন সন্দেহ নেই, আর আল্লাহর (হাদীস) বাণী অপেক্ষা কার (হাদীস) বাণী অধিক সত্যবাদী হতে পারে? আন-নিসা, ৪/৮৭
>>> তারা কি এই হাদীছের (তথা কুরআনের) প্রতি ঈমান আনবে না? <<<
فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَهُ يُؤْمِنُونَ
তাহলে তারা কুরআনের পরিবর্তে আর কোন (হাদীসের) বাণীর প্রতি ঈমান আনবে? আল-মুরসালাত, ৭৭/৫০
تِلْكَ آيَاتُ اللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَ اللَّهِ وَآيَاتِهِ يُؤْمِنُونَ
এগুলো আল্লাহর আয়াত, আমি তোমার কাছে তা যথাযথভাবেই বর্ণনা করছি, সুতরাং আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতের পরিবর্তে তারা আর কোন (হাদীসের) বাণীর প্রতি ঈমান আনবে? আল-জাসিয়া, ৪৫/৬
أَوَلَمْ يَنْظُرُوا فِي مَلَكُوتِ السَّمَاوَاتِ وَالأرْضِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ وَأَنْ عَسَى أَنْ يَكُونَ قَدِ اقْتَرَبَ أَجَلُهُمْ فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَهُ يُؤْمِنُونَ
তারা কি আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্বে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে না? এবং তারা কি এটাও চিন্তা করে না যে, তাদের জীবনের নির্দিষ্ট মেয়াদ হয়তো নিকটেই এসে গেছে? এরপর তারা কোন (হাদীসের) বাণীর প্রতি ঈমান আনবে? আল-আ‘রাফ, ৭/১৮৫
>>> তোমরা কি এই হাদীসকে তুচ্ছ মনে কর? <<<
إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ فِي كِتَابٍ مَكْنُونٍ لا يَمَسُّهُ إِلا الْمُطَهَّرُونَ تَنْزِيلٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ أَفَبِهَذَا الْحَدِيثِ أَنْتُمْ مُدْهِنُونَ
নিশ্চয় এটি মহা সম্মানিত কুরআন, যা (লিখিত) আছে সুরক্ষিত কিতাবে, পুত-পবিত্রগণ (ফেরেশতা) ছাড়া (শয়তানেরা) তা স্পর্শ করতে পারে না। জগৎসমূহের রবের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। তবুও কি তোমরা এই (হাদীসকে) বাণীকে তুচ্ছ গণ্য কর? আল-ওয়াকিয়া, ৫৬/৭৭-৮১
>>> কুরআন মনগড়া হাদীস নয় <<<
لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لأولِي الألْبَابِ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَى وَلَكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অবশ্যই তাদের বৃত্তান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিমানদের জন্য শিক্ষা, এটা (কুরআন) কোন মনগড়া (হাদীস) বাণী নয়, বরং পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ আর হেদায়াত ও রহমত ঐসব লোকদের জন্য যারা বিশ্বাস স্থাপন করে। ইউসুফ, ১২/১১১
فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَفْسَكَ عَلَى آثَارِهِمْ إِنْ لَمْ يُؤْمِنُوا بِهَذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا
তারা এই (হাদীসের) বাণীর (কুরআনের) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করার কারণে, (হে নবী) তুমি যেন, তাদের পিছনে পিছনে ঘুরে দুঃখে তোমার নিজের প্রাণ বিনাশ করে দেবে? আল-কাহ্ফ, ১৮/৬
>>> তারা যেন কুরআনের মত হাদীস নিয়ে আসে <<<
فَلْيَأْتُوا بِحَدِيثٍ مِثْلِهِ إِنْ كَانُوا صَادِقِينَ
অতএব যদি সত্যবাদী হয় তাহলে তারা তার (কুরআনের) অনুরূপ (হাদীস) বাণী নিয়ে আসুক? আত-তূর, ৫২/৩৪
>>> যারা হাদীসকে মিথ্যা মনে করবে তাদের আল্লাহ শাস্তি দিবেন <<<
فَذَرْنِي وَمَنْ يُكَذِّبُ بِهَذَا الْحَدِيثِ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِنْ حَيْثُ لا يَعْلَمُونَ
কাজেই ছেড়ে দাও আমাকে আর তাদেরকে যারা এ (হাদীসকে) বাণীকে মিথ্যারোপ করেছে; আমি তাদেরকে ধীরে ধীরে এমনভাবে পাকড়াও করব যে, তারা জানতেও পারবে না। আল-ক্বালাম, ৬৮/৪৪
>>> সম্পূর্ণ কুরআনের প্রতি ঈমান আনতে হবে <<<
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশকে বিশ্বাস কর আর কিছু অংশকে অবিশ্বাস করবে? আল-বাকারাহ, ২/৮৫
>>> আল্লাহই কুরআন সংরক্ষণ করছেন <<<
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
নিশ্চয় আমি উপদেশ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি, আর অবশ্যই আমিই তার হিফাযতকারী। আল-হিজ্র, ১৫/৯
إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ
নিশ্চয়ই এর (কুরআন) সংরক্ষণ ও পাঠ আমার দায়িত্ব। আল-ক্বিয়া-মাহ, ৭৫/১৭
>>> কুরআনে কোন রকম সন্দেহ নেই <<<
ذَلِكَ الْكِتَابُ لا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ
এটা সেই কিতাব যাতে সন্দেহ নেই, আল্লাহভীরুদের জন্য পথ নির্দেশ। আল-বাক্বারা, ২/২
সুতরাং যাচাই-বাচাই ছাড়াই সম্পূর্ণ কুরআন আমাদের মানতে হবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু রাসূলে হাদীসের ক্ষেত্রে সন্দেহ প্রবেশ করানো হয়েছে, তাতে জাল-যয়িফ অর্থাৎ মিথ্যা ও দুর্বল হাদীস আছে।
>>> হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী <<<
কারণ মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারী জাহান্নামী। সহীহ ও হাসান হাদীস ছাড়া জাল বা জঈফ হাদীস আমল করার জন্য বর্ণনা করা যাবে না। তবে বর্জন করার জন্য জঈফ ও জাল হাদীস জানা দরকার। জঈফ হাদীস রাসূলের সূন্নাহর ব্যাপারে কিছু অনুমান-ধারণার সৃষ্টি করে মাত্র। আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
" إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيث"
তোমরা ধারণা-অনুমান থেকে বেঁচে থাক কারণ ধারণা-অনুমান সর্বাপেক্ষা মিথ্যা কথা। সহীহুল বুখারী: ৬০৬৬, ৬৭২৪, সহীহ মুসলিম: ৬৪৩০
আর জাল বা মিথ্যা হাদীস যা স্পষ্ট রাসূলের কথা নয়। সুতরাং হাদীস যাচাই করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ
কোন ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়। (সহীহ মুসলিম, ভুমিকা-৫)
আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ
হে মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত না কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য যেন অনুতপ্ত না হও। আল-হুজুরাত, ৪৯/৬
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
“নিশ্চয় আমার উপর মিথ্যা বলা, কারো উপর মিথ্যা বলার মত নয়, যে আমার উপর মিথ্যা বলল সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়”। সহীহুল বুখারী: ১২৯১
لاَ تَكْذِبُوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ
তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না কারণ যে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে জাহান্নামে যাবে। সহীহুল বুখারী: ১০৬
مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
যে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়। সহীহুল বুখারী: ১০৭
مَنْ تَعَمَّدَ عَلَىَّ كَذِبًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ সহীহুল বুখারী: ১০৯
قَالَ أَنَسٌ إِنَّهُ لَيَمْنَعُنِي أَنْ أُحَدِّثَكُمْ حَدِيثًا كَثِيرًا أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ تَعَمَّدَ عَلَىَّ كَذِبًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এ কথাটি তোমাদেরকে বহু হাদীস বর্ণনা করতে আমাকে বাধা দেয় যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়। সহীহুল বুখারী: ১০৮, সহীহ মুসলিম
আল্লাহ বলেন-
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا لِيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍ إِنَّ اللَّهَ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
সুতরাং তার চেয়ে অধিক যালিম কে, যে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিনা দলিলে আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম লোকদেরকে হিদায়াত করেন না। আল-আন‘আম, ৬/১৪৪
রাসূলের নামে মিথ্যা হাদীছ বানানো হয়েছে, সম্মানিত মুহাদ্দিসগণ কোন্টি রাসূলের হাদীস আর কোন্টি রাসূলের হাদীস নয়, তা পৃথক করেছেন। তাই মিথ্যা ও দুর্বল হাদীছ ত্যাগ করে সহীহ ও হাসান হাদীসগুলো আমরা মানব।
উপসংহারঃ উপরের পর্যালোচনা থেকে বুঝা যায়, হাদীছ বললে আল্লাহর বাণী ‘কুরআন’ ও রসূলের বাণী ‘হাদীছ’ উভয়েই বুঝায়। আহল (أَهْل) অর্থ ধারক, বাহক, অনুসারী আর হাদীছ (حَدِيث) এর অর্থ হল বাণী। আহলে হাদিছ [أَهْلِ حَدِيث) বা আহলুল হাদিছ [أَهْلُ الْحَدِيث] শব্দের অর্থ হাদিছের অনুসারী। যারা আল্লাহর হাদীছ ‘কুরআন’ ও রসূলের সহীহ হাদীছের একনিষ্ঠ অনুসারী তারাই হল আহলে হাদীছ বা আহলুল হাদিছ আবার সুন্নাহর অপর নাম হাদীস, তাই যারা আহলুস্ সুন্নাহ তারাই আহলুল হাদীস।
=== বিষয়ঃ হাদীছ শব্দ দ্বারা কুরআনকেও বুঝানো হয়েছে ===
>>> আহলে হাদীস মানে কী? <<<
সুন্নাহর অপর নাম হাদিছ। আহল অর্থ অনুসারী এবং হাদীছ (حَدِيث) এর শাব্দিক অর্থ হল কথা, বাণী, কথাবার্তা, আলোচনা, কথিকা, সংবাদ, খবর, কাহিনী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা, কর্ম, সম্মতি, চারিত্রিক গুণবলীকে হাদীস বলা হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হাদীছ (কুরআন) ও রাসূলের হাদীছ (সহীহ হাদীছ) অনুসরণ করে তাকে আহলুল হাদীছ বলা হয়।
>>> কুরআন হল সর্বোত্তম হাদীস <<<
কারণ হাদীছ শব্দ দ্বারা কুরআনকেও বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন সর্বোত্তম (হাদীস) বাণী সম্বলিত সামঞ্জস্য পূর্ণ একটি কিতাব যা পুনরাবৃত্তি করা হয়, যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের গা এতে শিউরে ওঠে তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণের প্রতি বিনম্র হয়ে যায়; এটিই আল্লাহর হেদায়াত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হেদায়াত দান করেন আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথ প্রদর্শক নেই। আয-যুমার, ৩৯/২৩
>>> আল্লাহর হাদীস অধিক সত্যবাদী <<<
اللَّهُ لا إِلَهَ إِلا هُوَ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لا رَيْبَ فِيهِ وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثًا
আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই, অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে, এতে কোন সন্দেহ নেই, আর আল্লাহর (হাদীস) বাণী অপেক্ষা কার (হাদীস) বাণী অধিক সত্যবাদী হতে পারে? আন-নিসা, ৪/৮৭
>>> তারা কি এই হাদীছের (তথা কুরআনের) প্রতি ঈমান আনবে না? <<<
فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَهُ يُؤْمِنُونَ
তাহলে তারা কুরআনের পরিবর্তে আর কোন (হাদীসের) বাণীর প্রতি ঈমান আনবে? আল-মুরসালাত, ৭৭/৫০
تِلْكَ آيَاتُ اللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَ اللَّهِ وَآيَاتِهِ يُؤْمِنُونَ
এগুলো আল্লাহর আয়াত, আমি তোমার কাছে তা যথাযথভাবেই বর্ণনা করছি, সুতরাং আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতের পরিবর্তে তারা আর কোন (হাদীসের) বাণীর প্রতি ঈমান আনবে? আল-জাসিয়া, ৪৫/৬
أَوَلَمْ يَنْظُرُوا فِي مَلَكُوتِ السَّمَاوَاتِ وَالأرْضِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ وَأَنْ عَسَى أَنْ يَكُونَ قَدِ اقْتَرَبَ أَجَلُهُمْ فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَهُ يُؤْمِنُونَ
তারা কি আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্বে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে না? এবং তারা কি এটাও চিন্তা করে না যে, তাদের জীবনের নির্দিষ্ট মেয়াদ হয়তো নিকটেই এসে গেছে? এরপর তারা কোন (হাদীসের) বাণীর প্রতি ঈমান আনবে? আল-আ‘রাফ, ৭/১৮৫
>>> তোমরা কি এই হাদীসকে তুচ্ছ মনে কর? <<<
إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ فِي كِتَابٍ مَكْنُونٍ لا يَمَسُّهُ إِلا الْمُطَهَّرُونَ تَنْزِيلٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ أَفَبِهَذَا الْحَدِيثِ أَنْتُمْ مُدْهِنُونَ
নিশ্চয় এটি মহা সম্মানিত কুরআন, যা (লিখিত) আছে সুরক্ষিত কিতাবে, পুত-পবিত্রগণ (ফেরেশতা) ছাড়া (শয়তানেরা) তা স্পর্শ করতে পারে না। জগৎসমূহের রবের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। তবুও কি তোমরা এই (হাদীসকে) বাণীকে তুচ্ছ গণ্য কর? আল-ওয়াকিয়া, ৫৬/৭৭-৮১
>>> কুরআন মনগড়া হাদীস নয় <<<
لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لأولِي الألْبَابِ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَى وَلَكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অবশ্যই তাদের বৃত্তান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিমানদের জন্য শিক্ষা, এটা (কুরআন) কোন মনগড়া (হাদীস) বাণী নয়, বরং পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ আর হেদায়াত ও রহমত ঐসব লোকদের জন্য যারা বিশ্বাস স্থাপন করে। ইউসুফ, ১২/১১১
فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَفْسَكَ عَلَى آثَارِهِمْ إِنْ لَمْ يُؤْمِنُوا بِهَذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا
তারা এই (হাদীসের) বাণীর (কুরআনের) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করার কারণে, (হে নবী) তুমি যেন, তাদের পিছনে পিছনে ঘুরে দুঃখে তোমার নিজের প্রাণ বিনাশ করে দেবে? আল-কাহ্ফ, ১৮/৬
>>> তারা যেন কুরআনের মত হাদীস নিয়ে আসে <<<
فَلْيَأْتُوا بِحَدِيثٍ مِثْلِهِ إِنْ كَانُوا صَادِقِينَ
অতএব যদি সত্যবাদী হয় তাহলে তারা তার (কুরআনের) অনুরূপ (হাদীস) বাণী নিয়ে আসুক? আত-তূর, ৫২/৩৪
>>> যারা হাদীসকে মিথ্যা মনে করবে তাদের আল্লাহ শাস্তি দিবেন <<<
فَذَرْنِي وَمَنْ يُكَذِّبُ بِهَذَا الْحَدِيثِ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِنْ حَيْثُ لا يَعْلَمُونَ
কাজেই ছেড়ে দাও আমাকে আর তাদেরকে যারা এ (হাদীসকে) বাণীকে মিথ্যারোপ করেছে; আমি তাদেরকে ধীরে ধীরে এমনভাবে পাকড়াও করব যে, তারা জানতেও পারবে না। আল-ক্বালাম, ৬৮/৪৪
>>> সম্পূর্ণ কুরআনের প্রতি ঈমান আনতে হবে <<<
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশকে বিশ্বাস কর আর কিছু অংশকে অবিশ্বাস করবে? আল-বাকারাহ, ২/৮৫
>>> আল্লাহই কুরআন সংরক্ষণ করছেন <<<
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
নিশ্চয় আমি উপদেশ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি, আর অবশ্যই আমিই তার হিফাযতকারী। আল-হিজ্র, ১৫/৯
إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ
নিশ্চয়ই এর (কুরআন) সংরক্ষণ ও পাঠ আমার দায়িত্ব। আল-ক্বিয়া-মাহ, ৭৫/১৭
>>> কুরআনে কোন রকম সন্দেহ নেই <<<
ذَلِكَ الْكِتَابُ لا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ
এটা সেই কিতাব যাতে সন্দেহ নেই, আল্লাহভীরুদের জন্য পথ নির্দেশ। আল-বাক্বারা, ২/২
সুতরাং যাচাই-বাচাই ছাড়াই সম্পূর্ণ কুরআন আমাদের মানতে হবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু রাসূলে হাদীসের ক্ষেত্রে সন্দেহ প্রবেশ করানো হয়েছে, তাতে জাল-যয়িফ অর্থাৎ মিথ্যা ও দুর্বল হাদীস আছে।
>>> হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী <<<
কারণ মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারী জাহান্নামী। সহীহ ও হাসান হাদীস ছাড়া জাল বা জঈফ হাদীস আমল করার জন্য বর্ণনা করা যাবে না। তবে বর্জন করার জন্য জঈফ ও জাল হাদীস জানা দরকার। জঈফ হাদীস রাসূলের সূন্নাহর ব্যাপারে কিছু অনুমান-ধারণার সৃষ্টি করে মাত্র। আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
" إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيث"
তোমরা ধারণা-অনুমান থেকে বেঁচে থাক কারণ ধারণা-অনুমান সর্বাপেক্ষা মিথ্যা কথা। সহীহুল বুখারী: ৬০৬৬, ৬৭২৪, সহীহ মুসলিম: ৬৪৩০
আর জাল বা মিথ্যা হাদীস যা স্পষ্ট রাসূলের কথা নয়। সুতরাং হাদীস যাচাই করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ
কোন ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়। (সহীহ মুসলিম, ভুমিকা-৫)
আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ
হে মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত না কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য যেন অনুতপ্ত না হও। আল-হুজুরাত, ৪৯/৬
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
“নিশ্চয় আমার উপর মিথ্যা বলা, কারো উপর মিথ্যা বলার মত নয়, যে আমার উপর মিথ্যা বলল সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়”। সহীহুল বুখারী: ১২৯১
لاَ تَكْذِبُوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ
তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না কারণ যে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে জাহান্নামে যাবে। সহীহুল বুখারী: ১০৬
مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
যে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়। সহীহুল বুখারী: ১০৭
مَنْ تَعَمَّدَ عَلَىَّ كَذِبًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ সহীহুল বুখারী: ১০৯
قَالَ أَنَسٌ إِنَّهُ لَيَمْنَعُنِي أَنْ أُحَدِّثَكُمْ حَدِيثًا كَثِيرًا أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ تَعَمَّدَ عَلَىَّ كَذِبًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এ কথাটি তোমাদেরকে বহু হাদীস বর্ণনা করতে আমাকে বাধা দেয় যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়। সহীহুল বুখারী: ১০৮, সহীহ মুসলিম
আল্লাহ বলেন-
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا لِيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍ إِنَّ اللَّهَ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
সুতরাং তার চেয়ে অধিক যালিম কে, যে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিনা দলিলে আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম লোকদেরকে হিদায়াত করেন না। আল-আন‘আম, ৬/১৪৪
রাসূলের নামে মিথ্যা হাদীছ বানানো হয়েছে, সম্মানিত মুহাদ্দিসগণ কোন্টি রাসূলের হাদীস আর কোন্টি রাসূলের হাদীস নয়, তা পৃথক করেছেন। তাই মিথ্যা ও দুর্বল হাদীছ ত্যাগ করে সহীহ ও হাসান হাদীসগুলো আমরা মানব।
উপসংহারঃ উপরের পর্যালোচনা থেকে বুঝা যায়, হাদীছ বললে আল্লাহর বাণী ‘কুরআন’ ও রসূলের বাণী ‘হাদীছ’ উভয়েই বুঝায়। আহল (أَهْل) অর্থ ধারক, বাহক, অনুসারী আর হাদীছ (حَدِيث) এর অর্থ হল বাণী। আহলে হাদিছ [أَهْلِ حَدِيث) বা আহলুল হাদিছ [أَهْلُ الْحَدِيث] শব্দের অর্থ হাদিছের অনুসারী। যারা আল্লাহর হাদীছ ‘কুরআন’ ও রসূলের সহীহ হাদীছের একনিষ্ঠ অনুসারী তারাই হল আহলে হাদীছ বা আহলুল হাদিছ আবার সুন্নাহর অপর নাম হাদীস, তাই যারা আহলুস্ সুন্নাহ তারাই আহলুল হাদীস।
==== বিষয়ঃ আস্-সালাফ আস্-সালেহীন এর মানহাজ ====
(সালাফ) سَلَف শব্দটি (س ل ف) ধাতু থেকে এসেছে। সালাফ শব্দের মাদ্বি (অতীত কাল) এর ছিগা হল سَلَفَ (সালাফা) এবং এটি form I যার অর্থ হল আগে চলে যাওয়া, পূর্ববর্তী হওয়া, বিগত হওয়া। শব্দটির Verbal noun হল سَلَف (সালাফ) যার অর্থ অতীত, বিগত, পূর্ববর্তী। শব্দটির অন্য আরেকটি অর্থ হল অগ্রিম, আগাম, ধার, ঋণ, পূর্বসুরী, পূর্বপুরুষ। শব্দটির বহুবচন হল أَسْلَف (আসলাফ)।
সালেহীন صَالِحِين শব্দটি বহুবচন, এর একবচন হল صَالِح সোলেহ যার অর্থ সৎলোক, ভাল মানুষ, যোগ্য লোক, নেকলোক।
মানহাজ مَنْهَج অর্থ পথ, পন্থা, পদ্ধতি, প্রণালী, রাস্তা, প্রোগ্রাম, কার্যক্রম, পাঠক্রম, সিলেবাস, কারিকুলাম।
সুতরাং সলফে সালেহীন অর্থ হল অতীতের বা পূর্ববর্তী নেকলোকগণ বা সৎবান্দাগণ।
সুতরাং সলফে সোলেহীনের মানহাজ মানে হল, পূর্ববর্তী সৎলোকগণ যে পথ, পন্থা, পদ্ধতি, নীতি অনুসরণ করেছিল তাই হল সালাফে সালেহীনের মানহাজ। যাকে সংক্ষেপে সালাফ মানহাজ বলা হয়। আর যারা এই সব পূর্ববর্তী নেকলোক বা সৎলোকদের অনুসরণ করে থাকে তাদেরকে সালাফী বলা হয়।
>>> কুরআনের আয়াতে سَلَف (সালাফ) অর্থ অতীত, বিগত <<<
فَجَعَلْنَاهُمْ سَلَفًا وَمَثَلا لِلآخِرِينَ
অতঃপর পরবর্তীদের জন্য আমি তাদেরকে করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্ত। যুখরুফ, ৪৩/৫৬
>>> সালাফ শব্দের মাদ্বি এর রূপ سَلَفَ (সালাফা) যার অর্থ অতীত হওয়া, বিগত হওয়া <<<
قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنْتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ وَإِنْ يَعُودُوا فَقَدْ مَضَتْ سُنَّةُ الأوَّلِينَ
যারা কুফরী করেছে তুমি তাদেরকে বলে দাও, যদি তারা বিরত হয় তাহলে অতীতে যা অপরাধ হয়েছে তা তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে আর যদি তারা পুনরাবৃত্তি করে তাহলে পূর্ববর্তীদের (ক্ষেত্রে আল্লাহর) রীতি তো গত হয়েছে। আনফাল, ৮/৩৮
عَفَا اللَّهُ عَمَّا سَلَفَ وَمَنْ عَادَ فَيَنْتَقِمُ اللَّهُ مِنْهُ وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انْتِقَامٍ
অতীতে যা হয়ে গেছে তা আল্লাহ ক্ষমা করেছেন, আর যে ব্যক্তি পুনরায় করবে আল্লাহ তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আল-মায়িদাহ, ৫/৯৫
فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার ফলে বিরত হল, অতীতে যা হয়ে গেছে তা তারই জন্য, আর তার বিষয় আল্লাহর উপর নির্ভরশীল আর যারা পুনরাবৃত্তি করবে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল-বাকারাহ, ২/২৭৫
وَلا تَنْكِحُوا مَا نَكَحَ آبَاؤُكُمْ مِنَ النِّسَاءِ إِلا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاءَ سَبِيلا
আর তোমরা বিবাহ করো না নারীদের মধ্য থেকে যাদেরকে বিবাহ করেছে তোমাদের পিতৃপুরুষগণ তবে যা বিগত হয়েছে (তা ক্ষমা করা হল) নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল, অরুচিকর এবং নিকৃষ্ট পথ। আন-নিসা, ৪/২২
إِلا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا
তবে অতীতে যা হয়ে গেছে (তা ভিন্ন), নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আন-নিসা, ৪/২৩
>>> সালাফ শব্দের বহুবচন أَسْلَف (আসলাফ) যার অর্থ অতীত, বিগত, পূর্বে <<<
هُنَالِكَ تَبْلُو كُلُّ نَفْسٍ مَا أَسْلَفَتْ وَرُدُّوا إِلَى اللَّهِ مَوْلاهُمُ الْحَقِّ وَضَلَّ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَفْتَرُونَ
সেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি অতীতে যা করেছে তা যাচাই করে নিতে পারবে এবং তাদেরকে তাদের প্রকৃত অভিভাবক আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে আর তারা যা মিথ্যা রচনা করতো তা তাদের থেকে হারিয়ে যাবে। ইউনুস, ১০/৩০
كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الأيَّامِ الْخَالِيَةِ
(তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান কর, অতীত দিনে তোমরা যা অগ্রে প্রেরণ করেছিলে তার বিনিময়ে। আল-হাক্কাহ, ৬৯/২৪
>>> (সালাফে সালেহীন) سَلَفِ الصَّالِحِين কারা? <<<
সালাফে সালেহীন বলতে বুঝায় প্রথম তিন স্বর্ণযুগের লোকদেরকে, তথা; সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন এবং আমাদের সম্মানিত হেদায়াতপ্রাপ্ত ইমামগণ। সুতরাং পরবর্তীতে তাদের অনুসরণকারী এবং তাঁদের পথ অবলম্বনকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁদের প্রতি সম্বোধন করতঃ সালাফী বলা হয়।
==== বিষয়ঃ আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত ====
আহল অর্থ অনুসারী আর সুন্নাহ অর্থ রীতি, নিয়ম, পথ, পন্থা। এবং 'জামাআহ' অর্থ দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়। সুন্নাতের কিছু অনুসারী আছে যারা জামাতবদ্ধ সুদৃঢ় আকীদা-বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত; তাদেরকে ‘আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ বলা হয়।
এখানে তিনটি বিষয় রয়েছেঃ ১. আকীদা ২. আহলুস্ সুন্নাহ ৩. আল-জামাআহ। নিম্নে প্রত্যেকটির পরিচয় দেয়া হলোঃ
>>> প্রথম : 'আকীদা' এর অর্থঃ <<<
আকীদার শাব্দিক অর্থ বন্ধন, বাঁধন, দৃঢ়ভাবে বাঁধা। পারিভাষিক অর্থ আকীদা এমন সুদৃঢ় ও সঠিক ঈমানকে বলে, যার মধ্যে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সুতরাং যদি তার সে সুদৃঢ় বিশ্বাস বিশুদ্ধ ও সঠিক হয়, তাহলে আকীদাও বিশুদ্ধ এবং সঠিক হবে। যেমন- আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা আর যদি তা ভ্রান্ত হয়, তাহলে আকীদাও ভ্রান্ত এবং বাতিল বলে গণ্য হবে। যেমন- বিভিন্ন ভ্রান্ত আকীদাপন্থী পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের আকীদা ও বিশ্বাস।
>>> দ্বিতীয় : 'আহলুস্ সুন্নাহ ' এর অর্থঃ <<<
[সুন্নাহ] سُنَّة এর শাব্দিক অর্থ রীতি, নিয়ম, পথ, পন্থা; তা উৎকৃষ্ট হোক কিংবা নিকৃষ্ট হোক। ইসলামী আকীদাপন্থীদের পরিভাষায় ‘সুন্নাহ’ অর্থ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ যে জীবনাদর্শ অনুযায়ী জীবন-যাপন করেছেন সে জীবনাদর্শকে ‘সুন্নাহ’ বলা হয়। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করাকে 'আহলুস্ সুন্নাহ' বলা হয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ؛ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে; সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর এবং তা দাঁত দিয়ে (অর্থাৎ খুব শক্তভাবে) ধরে রাখ; আর তোমরা দীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কারণ প্রত্যেক নতুন বিষয়ই হচ্ছে বিদ'আত, প্রত্যেক বিদ'আত হচ্ছে গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা। (আবূ দাউদ: ৪৬০৭, আত-তিরমিযী: ২৬৭৬, আহমদ: ১৬৬৯৫, ইবনে মাজাহ: ৪২, এবং মাজমুওয়ায়ে ফাতাওয়া: ১০/৩৫৪) ইমাম আত-তিরমিযী বলেন, হাদীছটি হাসান সহীহ।
সালিম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ‘উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলতেন-
يَقُولُ أَلَيْسَ حَسْبُكُمْ سُنَّةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতই কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? সহীহুল বুখারী: ১৮১০
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। সহীহুল বুখারী: ৫০৬৩, সহীহ মুসলিম: ৩২৯৪
এটা এমন এক আদর্শ, যা অনুসরণ করা ওয়াজিব। এ সুন্নাতের অনুসারীদের প্রশংসা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে এর বিরোধীদের নিন্দা করা হয়েছে। এজন্যই বলা হয় অমুক ব্যক্তি আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারী অর্থাৎ সে সুদৃঢ় ও প্রশংসিত আদর্শের অনুসারী।
হাফেয ইবনে রজব (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সুন্নাত হলো প্রচলিত পদ্ধতি, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের বিশ্বাস, ‘আমাল ও বক্তব্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে; এটাই হলো প্রকৃত সুন্নাত। [জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম: ১/১২০]
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সুন্নাত হল ঐ সকল আমল, যা পালনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুগত হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তের দলিল রয়েছে। হয় তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে পালন করেছেন বা তাঁর অনুমোদনে সে যুগে পালন করা হয়েছে অথবা চাহিদা না থাকায় কিংবা অসুবিধার কারণে সে যুগে পালিত হয়নি। এ সবই সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। [মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া: ২১/৩১৭]
>>> তৃতীয় : 'জামাআহ' <<<
এর শাব্দিক অর্থ দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় ইত্যাদিঃ
ইবনে ফারেস (রহিমাহুল্লাহ) বলেন- জীম, মীম ও আইন হরফ দ্বারা গঠিত শব্দ কোন বস্তু একত্রিত করা বুঝায়।
ইসলামী আকীদার পরিভাষায় জামাআত হল, উম্মতে মুহাম্মাদীর নেককার ব্যক্তিবর্গ। যেমন-সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসারীগণ, যারা কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলের উপর ঐকমত্য পোষণকারী। [শরহু আকীদাতি আত-তহাবী: ৬৮পৃ:]
>>> তারা কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতের অনুসারী <<<
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন-
تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّتِيْ
আমি তোমাদের মাঝে দুটি বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এই দুটিকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে কক্ষনো পথভ্রষ্ট হবে না। বস্তু দুটি হলঃ আল্লাহর কিতাব (তথা আল-কুরআন) এবং আমার সুন্নাত (তথা হাদীছ)। [হাকেম: ১/১৭২, ৩১৯, বায়হাক্বী: ১০/১১৪, ২০৮৩, মালেক: ১৫৯৪, হাদীছ বিশুদ্ধ। আলবানীর ছহীহুল জামে‘য়া ২৯৩৭, ৩২৩২]
তারা কিতাবুল্লাহ ও রাসূলের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে ধারণকারী হবে। যে আর্দশের উপর আনসার ও মুহাজির সাহাবায়ে কেরামগণ ছিলেন, তারাও সে আদর্শের অনুসারী হবে।
তারা হল الْجَمَاعَةُ [আল-জামা‘আহ] একটি দল, যারা সুন্নাতের অনুসারী
আওফ বিন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
افْتَرَقَتْ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً فَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ وَافْتَرَقَتْ النَّصَارَى عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً فَإِحْدَى وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَتَفْتَرِقَنَّ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ هُمْ قَالَ الْجَمَاعَةُ
ইহুদীরা একাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে, তন্মধ্যে একদল জান্নাতী এবং সত্তর দল জাহান্নামী। খ্রীষ্টানরা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে, তন্মধ্যে একাত্তর দল জাহান্নামী ও একদল জান্নাতী। ঐ সত্ত্বার শপথ! যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন, নিশ্চয়ই আমার উম্মত তেহাত্তর দলে বিভক্ত হবে, তাদের একদল জান্নাতী এবং বাহাত্তর দল জাহান্নামী। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বললেন, তারা হল الْجَمَاعَةُ (আল-জামা‘আহ) একটি দল। (যারা সুন্নাতের অনুসারী) [ইবনে মাজা: ২/৩২১]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً কেবলমাত্র একটি দল (যারা জান্নাতী), সাহাবীগণ বললেন, وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা ? উত্তরে তিনি বললেন- ما أنا عليه وأصحابي যারা আমার এবং আমার সাহাবায়ে কেরামের অনুসারী। [আত-তিরমিযী: ২৬৪১]
আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, জামাআত ঐ বিষয়কে বলে, যা সত্যের অনুকূল হয়, যদিও তাতে তুমি একা হও।
নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যখন জামাআত ভেঙ্গে যাবে তখন তোমার জন্য আবশ্যক হল, ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্বে জামাআত যে উদ্দেশ্য ও আর্দশের উপর ছিল সে আর্দশের উপর অটল থাকা, যদিও তুমি একা হও। কেননা সে সময় তুমি একাই জামাআত হিসেবে গণ্য হবে। [ইগাসাতিল লাফহান, ইবনে তাইমিয়া: ১/৭০]
>>> তারা মুক্তিপ্রাপ্ত দল <<<
যে দলটি জান্নাতে যাবে তাদের পরিচয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ما أنا عليه اليوم وأصحابي ‘আজকের দিনে আমি ও আমার ছাহাবীগণ যে নীতির উপরে আছি, তার অনুসারী দল (হাকেম ১/১২৯)।
ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
تَبْيَضّ وُجُوْهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَ الاِئْتِلافِ، وَتَسْوَدُّ وُجُوْهُ أَهْلِ الْبِدْعَةِ وَ التَّفَرُّقِ.
আহলুস্ সুন্নাহ তথা সুন্নাতের অনুসারীদের চেহারা উজ্জ্বল হবে ও বিদআতপন্থীদের চেহারা অন্ধকারের ন্যায় কালো হবে। [ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুয়াত্তালা ওয়াল জাহমিয়া, ইবনে কাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ): ২/৩৯]
>>> তারা সর্বদা হকের উপর অটল থাকবে <<<
মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي قَائِمَةٌ بِأَمْرِ اللهِ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ أَوْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ ظَاهِرُوْنَ عَلى النَّاسِ )متفق عليه(
আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা আল্লাহর নির্দেশের উপর অটল থাকবে। বিরোধীদের বিরোধিতা ও অপমানকারীদের অপমান তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহর ফয়সালা (কিয়ামত) আসার পূর্ব পর্যন্ত তারা সর্বদা মানুষের উপর বিজয়ী থাকবে। সহীহুল বুখারী: ৩৬৪১
মুগীরা ইবনে শুবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য রেওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَذَلِكَ
'সর্বদা আমার উম্মতের একটি দল সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর ফয়সালা (কিয়ামত) আসার পূর্ব পর্যন্ত, অপমানকারীদের অপমান তাদের কোন ক্ষতি করবে না।' সহীহ মুসলিম: ৪৮৪৪
ইবনে তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ হচ্ছে সর্বোত্তম উম্মত, তারা সহজ, সরল ও সঠিক পথের অনুসারী। [ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া: ৩/৩৬৮]
>>> তারা মানুষের কাছে অচেনা দল <<<
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
بَدَأَ الْإِسْلَامُ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ غَرِيبًا فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ
ইসলাম অচেনা ক্ষুদ্র পরিসরে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং অতিসত্তর তা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে, সুতরাং সুসংবাদ অচেনা দলের জন্য। সহীহ মুসলিম: ২৬৭
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ'স রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম আহমদ (রহিমাহুল্লাহ) অন্যত্র বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! অচেনা ক্ষুদ্র দল কারা? তিনি বললেন, অধিকাংশ পাপীদের মধ্যে কিছু সৎকর্মপরায়ণ লোক। মুসনাদে ইমাম আহমদ: ২/১৭৭
অন্য সূত্রে বর্ণিত এক হাদীসে রয়েছে, যখন মানুষ বিশৃংখল হয়ে পড়ে, তখন তারা সংশোধন করে দেয় এবং নিজেরা সঠিক পথে চলে। আহমদ: ৪/১৭৩
>>> কুরআনে আল্লাহর দল <<<
وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আর মুমিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তবে নিশ্চয় সেটি আল্লাহর দল আর তারাই বিজয়ী হবে। আল-মায়িদাহ, ৫/৫৬
لا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الإيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الأنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُولَئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায়/দল তুমি পাবে না যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদেরকে ভালবাসে, হোক না এই বিরোধীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা তাদের জ্ঞাতি গোষ্ঠি। আল্লাহ এদের অন্তরে ঈমান বদ্ধমূল করে দিয়েছেন, এবং তাদেরকে তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা শক্তিশালী করেছেন; তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হয়, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে; এরাই আল্লাহর দল; জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম। আল-মুজাদালাহ, ৫৮/২২
উপসংহারঃ যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের আর্দশের অনুসারী এবং সুন্নাতকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণকারী। যথা- তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী ও হেদায়াতপ্রাপ্ত ইমামগণ। তারা সুন্নাতের অনুসরণে সুদৃঢ় ও সর্বদা সকল প্রকার বিদআত থেকে দূরে থাকে। বিদআতপন্থী ও প্রবৃত্তির অনুসারী দলসমূহের বিপরীত একটি সঠিক দল। এরাই কিয়ামত পর্যন্ত সাহায্যপ্রাপ্ত জামাআত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে এবং বাহ্যিক, আন্তরিক, ও মৌখিক কার্যাবলীতে সুন্নাতকে সম্মিলিতভাবে আঁকড়ে ধরার কারণে তাদের নামকরণ করা হয়েছে, “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত”। আর আমি সেই দলেরই একজন। হে আল্লাহ! সর্বদা তুমি আমাকে সেই দলের মধ্যে শামিল রাখ। আমিন
তথ্যসূত্র :
বই: ওয়াহীর জ্ঞান। সংকলন: মোহাম্মদ সাইদুর রহমান; সম্পাদনা: অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক; প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স।
আজকের আইডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url