পলিটিক্স/ রাজনীতি | শরিফ গাজী অফিসিয়াল

পলিটিক্স/ রাজনীতি





>>> পলিটিক্স/ রাজনীতি <<<
রাজনীতির অনেক রকম সংজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু রাজনীতির মূলে রয়েছে ক্ষমতা। আমার অভিজ্ঞতায় পলিটিক্স/রাজনীতি চার প্রকার, যার সবগুলো ডার্টি পলিটিক্স বা নোংরা রাজনীতি। আমি এখানে সেগুলোই তুলে ধরবো।
১) ফ্যামিলি পলিটিক্স (পারিবারিক রাজনীতি),
২) ভিলেজ পলিটিক্স (গ্রাম্য রাজনীতি),
৩) ন্যাশনাল পলিটিক্স (জাতীয় রাজনীতি) ও
৪) ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স (আন্তর্জাতিক রাজনীতি)

১) ফ্যামিলি পলিটিক্স (পারিবারিক রাজনীতি)ঃ
আগেই বলে রাখি, ফ্যামিলি পলিটিক্স-এর খারাপ দিকগুলো সকল পরিবারের মধ্যে পাবেন না। নির্দিষ্ট কিছু পরিবারের মধ্যে তা পাওয়া যায়। এর পরিধি পরিবারের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী/স্বামী-সন্তান বা আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফ্যামিলি পলিটিক্সে পরিবারের একজনের উপর সব দোষ দোষ চাপানো হয়। ধরুন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাচঁজন। তাহলে এখানে সব দোষ যে ব্যক্তি দুর্বল, অসহায় তার উপর চাপানো হয়। যে দুর্বল তাকে আরও দুর্বল করে রাখা হয়। তাকে কোনভাবে উঠতে দেওয়া হয় না। যে ব্যক্তি ফ্যামিলি পলিটিক্সে-এর নেতৃত্ব দেয় সে দুর্বল, অসহায় ব্যক্তির নামে অন্য সদস্যদের মিথ্যা বলে, গীবত, চোগলখুরী, দোষারোপ করে থাকে। লিডার পরিবারের অন্য লোকদের কাছে এমনভাবে গুছিয়ে কথা বলে যে, বাকী সদস্যরা মনে করে এ দুর্বল লোকটি আসলেই একজন মন্দ ও খারাপ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে দুর্বল ব্যক্তিটি অনেক ক্ষেত্রে মানষিক রোগী হয়ে যেতে পারে। তখন পরিবারের সদস্যরা তাকে পাগল বলেও প্রচার করতে পারে। এমন অবস্থায়ও তারা দুর্বল ব্যক্তিটির জন্য ভাল কোন উদ্যোগ নেয় না। কারণ এতে তাদের ইগতে আঘাত লাগে।

আবার এই ফ্যামিলি পলিটিক্স-এর রূপ পরিবর্তন হয় ও পরিধি বড় হয়ে যায় যখন পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। যখন ভাই-বোনদের বিয়ে হয় এবং তাদের ঘরে সন্তান আসে। তখন কোন একজন চাচা তার ভাতিজার উপর সব দোষ চাপিয়ে দেয় এবং অন্য চাচারা এতে সমর্থন দেয়। মনে হয় যেন, সব চাচারা ফেরেশতা তাদের কোন দোষ নাই। এখানে সদস্য সংখ্যা বেশী তাই এখানে দুটি/তিনটি গ্রুপ হয়। যে ভাল নেতৃত্ব দিতে পারে তার দলে সদস্যা সংখ্যা বেশী হয়। এখানে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের গীবত, চোগলখুরী, দোষারোপ করতে থাকে। এখানে লিডারের অনেক ভুমিকা থাকে। লিডার সর্বদা চেষ্টা করে তার গ্রুপে সবল ও চতুরদের রাখতে। লিডার ও চতুররা মিলে দুর্বলকে অপমান, হেয়, হেস্তনেস্থ করে থাকে। এ অবস্থায় দুর্বলরা চেষ্টা করে নিজেকে অন্য আত্মীয়দের থেকে দুরে রাখতে। কারণ চতুরদের সাথে মিশলেই বিভিন্ন সমস্যা হয়। আর তারা বিভিন্ন ঝামেলা করে থাকে। দুর্বলদের প্রতি লিডারের থাকে হিংসা। লিডারের ভয় ঐ দুর্বল, ভীরুটা যদি আবার তার সব দখল করে ফেলে। তার সব গোমর অন্য সদস্যদের ফাঁস দেয়।

আমাদের সকলের উচিত এই নোংরা ফ্যামিলি পলিটিক্স পরিত্যাগ করা। কারণ এর মাধ্যমে নিজেদের পরিবারের নামেই গীবত, চোগলখুরী, দোষারোপ চলতে থাকে যা পরবর্তী প্রজম্মের উপরও তার ক্ষতিকর প্রভাব পরে। আর মহান আল্লাহর বাণী;
وَلا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلا تَنَابَزُوا بِالألْقَابِ بِئْسَ الاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الإيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না, ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা অতি নিকৃষ্ট আর যারা তাওবা করে না তারাই তো যালিম। (আল-হুজুরাত: ৪৯/১১)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন;
لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلاَ اللَّعَّانِ وَلاَ الْفَاحِشِ وَلاَ الْبَذِيءِ
মুমিন কখনো দোষারোপকারী হয় না, অভিসম্পাত করে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না। (তিরমিযী ১৯৭৭, সহীহাহ ৩২০, সহীহ)

২) ভিলেজ পলিটিক্স এর পরিধি ফ্যামিলি পলিটিক্স থেকে আরও বড়। এর পরিধি ১০/২০টি পরিবার নিয়ে কিংবা ১টি গ্রাম বা কয়েকটি গ্রাম নিয়ে হয়ে থাকে। এই ভিলেজ পলিটিশিয়ানরা হিংসুটে হয়। যদি দেখে, গ্রামের অন্য কেউ তার চেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে বা ধন-সম্পদে তার চেয়ে বেশী হয়ে যাচ্ছে, তাহলেই নানা ছলচাতুরি করে তাকে বিপদে ফেলে। তাকে যেভাবেই হোক সর্বশান্ত করার চেষ্টা করে। গ্রামে কোন লোককে ধন-সম্পদে বা শিক্ষায়-দীক্ষায় উন্নতি করতে দেখলে তাকে কিভাবে বিপদে ফেলে ধন-সম্পদ খোয়ানো যায় সেই চেষ্টা করতে থাকে ঐ ভিলেজ পলিটিশিয়ানরা। নিজেদের স্বার্থ লাভের জন্য তাঁরা সবকিছুই করতে পারে। গ্রামে সবসময়ই একজনের সাথে আরেকজনের দ্বন্দ বা ঝামেলা বাধিয়ে দিয়ে ভিলেজ পলিটিশিয়ানরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা সফলও হয়।

কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلَى مَا آتَاهُمُ اللهُ مِن فَضْلِهِ
আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন, সে জন্য কি তারা তাদেরকে হিংসা করে? (নিসা: ৪/৫৪)

অত্র আয়াতের তাফসীরে ইমাম কুরতুবী বলেন,
وَالْحَسَدُ مَذْمُومٌ وَصَاحِبُهُ مَغْمُومٌ وَهُوَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ
‘হিংসা নিন্দনীয় এবং হিংসুক ব্যক্তি সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। হিংসা সকল নেকী খেয়ে ফেলে যেমন আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে’। (তাফসীরে কুরতুবী)

নবী (ﷺ) বলেছেন,
إِيَّاكُمْ وَسُوءَ ذَاتِ الْبَيْنِ فَإِنَّهَا الْحَالِقَةُ ‏
তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ ( দুশমনী) পোষণ করা হতে বিরত থাকবে, কেননা তা দ্বীনকে ধ্বংস করে দেয়। (তিরমিযী ২৫০৮, হাসান)

যদি গ্রামের কোন সুন্দরী মেয়ের দিকে ভিলেজ পলিটিশিয়ানদের কু-দৃষ্টি পড়ে তাহলে তো তার আর রক্ষা নেই। যেভাবে হোক তিনি তার ফাঁয়দা হাসিল করতে চাইবেন। আর যদি না পারে তাহলে ঐ সুন্দরী মেয়েকে নানা কৌশলে সমাজের কাছে দুশ্চরিত্রা বানায়। এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাকেই উল্টো ফাঁদে পড়তে হয়, বিপদে পড়তে হয়। যাঁরা এই ভিলেজ পলিটিক্সের লিডার তাঁরা সবসময় সমাজের কাছে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে চান। গ্রামের সবাই তাঁদেরকে সামনে-সামনে সম্মানের চোখে দেখে, কিন্তু প্রকৃতভাবে ভিলেজ পলিটিশিয়ানদেরকে কেউই সম্মানের চোখে দেখে না।

৩) ন্যাশনাল পলিটিক্স (জাতীয় রাজনীত) ঃ
ভিলেজ পলিটিক্স আর ন্যাশনাল পলিটিক্স এক নয়। বেশ কয়েক যুগ ধরে ন্যাশনাল পলিটিক্স ডার্টি পলিটিক্স বা নোংরা রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। এখানে এখন পরিচ্ছন্ন রাজনীতি বলতে কিছু নেই। ন্যাশনাল পলিটিক্স হলো সরকারী দল বিরোধী দলকে দমন-পীড়ন করবে। সরকারী দলের হাতে সকল ক্ষমতা তাই তার কথা মত বিরোধীদল চলবে। বিরোধী দল কতটুকু ক্ষমতা পাবে তা সরকারী দল নির্ধারণ করবে। বিরোধী দলের উপর মামলা-হামলা, হত্যা, গুম ইত্যাদি চলবে। এভাবে এক সময় বিরোধী দল বলতে কিছু থাকবে না। আমি, আপনি সবাই সরকারী দলে পরিণত হবো।

এটা হলো গণতান্ত্রিক দেশের ন্যাশনাল পলিটিক্স। আবার রাজতান্ত্রিক দেশে ন্যাশনাল পলিটিক্স ও ফ্যামিলি পলিটিক্স এক সাথে চলে। রাজ পরিবারের অন্য যে সদস্য প্রিন্সের ক্ষমতার ভাগিদার হওয়ার আশংকা আছে তাকে জেলে ভরে রাখা হয় কিংবা হত্যা করা হয়। বর্তমানের রাজতান্ত্রিক দেশ ও অতীতের ইতিহাস পড়লে তার সত্যতা পেয়ে যাবেন।

আবূ হুরায়রাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ
إِنَّكُمْ سَتَحْرِصُوْنَ عَلَى الْإِمَارَةِ وَسَتَكُونُ نَدَامَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَنِعْمَ الْمُرْضِعَةُ وَبِئْسَتِ الْفَاطِمَةُ
শীঘ্রই তোমরা ক্ষমতা ও নেতৃত্বের জন্য লালায়িত হয়ে পড়বে। আর এ কারণে নিশ্চয় কিয়ামতের দিন তোমরা লজ্জিত হবে। অতঃপর তা কতই না উত্তম দুধপানকারিণী এবং দুধ ছাড়ানোকারিণী কতই না মন্দ। (বুখারী; ৭১৪৮, মিশকাতুল মাসাবীহ: ৩৬৮১)

৪) ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্সঃ
বর্তমানের ইন্টারন্যাশনাল রাজনীতি হলো মুসলিমদের অপরাধী/সন্ত্রাসী বানানো। ভারত, কাশ্মীর, মায়ারমার, চীন, ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান সহ সারা বিশ্বে মুসলিমরা নির্যাতিত তবুও তারাই অপরাধী তারাই সন্ত্রাসী। ইসরাইলের সংক্ষিপ্তরূপ Is তবুও মুসলিমদেরকে আইএস সন্ত্রাসী বলা হয়। কাফেরদের তকমা মুসলিমদের উপর লাগনো এটাই হলো বর্তমান ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স।

সুনানে আবু দাউদের একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, ‘তোমাদের ওপর এমন একটি সময় আসবে, তোমাদের বিরুদ্ধে সকল জাতি এমনভাবে ডাকবে, যেমনটি খাওয়ার দস্তরখানের দিকে লোকদের ডাকা হয়ে থাকে! এ কথা শোনে একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সে দিন কি আমাদের মুসলিমদের সংখ্যা কম হবে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, না, সেদিন তোমরা সংখ্যায় কম হবে না। বরং তোমরা সেদিন আরো অনেক বেশি হবে। তবে তোমরা বন্যার পানির উপরিভাগে ভাসমান খড়কুটার মত হবে। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দুশমনদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দেবেন। আর তোমাদের অন্তরে ওহান ঢেলে দেবেন। এক লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ওহান জিনিসটি কী? আল্লাহর রাসূল বললেন, দুনিয়ার মহব্বত আর মৃত্যুকে অপছন্দ করা।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪২৯৭)

পলিটিক্স/ রাজনীতি
পলিটিক্স/ রাজনীতি

Price : *Happy Shopping
Order via whatsapp Order via Email

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Content copy is disabled! Default text copied.