ইবনু মাজাহ (রহঃ) জীবনী
ইবনু মাজাহ (রহঃ) –
হিজরী তৃতীয় শতক ছিল হাদীছ সংকলনের
স্বর্ণযুগ। কুতুবুস সিত্তার সবগুলো গ্রন্থই এ
শতকে সংকলিত হয়েছে। আর এ কুতুবুস সিত্তার
অন্যতম একটি গ্রন্থ হ’ল ‘সুনানু ইবনি মাজাহ’।
শুধু ইবনু মাজাহ নয়, বরং তিনি মহাগ্রন্থ আল-
কুরআনের সুবিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ﺗﻔﺴﻴﺮ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ
ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ এবং তত্ত্ব ও তথ্যনির্ভর ইতিহাসগ্রন্থ ﺗﺎﺭﻳﺦ
ﻣﻠﻴﺢ প্রণয়ন করে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন।
আলোচ্য নিবন্ধে ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর
সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং ইলমে হাদীছে তাঁর
অনন্য সংকলন সুনানে ইবনু মাজাহ সম্পর্কে
আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর প্রকৃত নাম
মুহাম্মাদ।[1] পিতার নাম ইয়াযীদ,[2] উপনাম
আবু আব্দুল্লাহ,[3] উপাধি ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ (আল-
হাফিযুল কাবীর),[4] নিসবতী নাম আর-রাবঈ,
[5] আল-কাযভীনী।[6] তিনি ইবনু মাজাহ
নামেই সমধিক পরিচিত।[7] তাঁর পুরো
বংশপরিক্রমা হ’ল-
ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﺍﻟﻤﻔﺴﺮ ﺃﺑﻮ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ
ﺍﻟﺮﺑﻌﻲ ﺍﻟﻘﺰﻭﻳﻨﻲ
‘আল-হাফিযুল কাবীর আল-মুফাসসির আবু
আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে
আব্দুল্লাহ ইবনে মাজাহ আর-রাবঈ আল-
কাযভীনী’।[8]
ইবনু মাজাহ-এর ‘মাজাহ’ নামটি কার উপাধি,
এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ
রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মাজাহ তাঁর পিতার
উপাধি, আবার কেউ বলেন, তাঁর দাদার
উপাধি।[9]
এ মতবিরোধ নিরসনকল্পে ‘তাহযীবুল আসমা
ওয়াল লুগাত ফিল কামূস’ গ্রন্থের প্রণেতা
বলেন, ﻟﻘﺐ ﻭﺍﻟﺪﻩ ﻻ ﺟﺪﻩ ﻭﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻫﻮ ﺍﻷﻭﻝ ‘মাজাহ তাঁর
পিতার উপাধি, দাদার নয়। আর বিশুদ্ধ
অভিমত হ’ল প্রথমটি’।[10]
শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ)
‘বুসতানুল মুহাদ্দিছীন’ গ্রন্থে লিখেছেন,
মাজাহ ছিল তাঁর মায়ের নাম। তিনি আরো
বলেন, ইবনু মাজাহ মুহাম্মাদের ছিফাত,
আব্দুল্লাহর নয়।[11]
তিনি ২০৯ হিজরী মোতাবেক ৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে
ইরাকের প্রসিদ্ধ শহর কাযভীনে জন্মগ্রহণ
করেন।[12] মুসলিম জাহানের তৃতীয় খলীফা
ওছমান বিন আফফান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে
এ শহরটি বিজিত হয়।[13] এ শহরের প্রথম গভর্ণর
বা প্রশাসক ছিলেন বিশিষ্ট ছাহাবী বারা
ইবনু আযেব (রাঃ)।[14]
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) নিজ দেশেই
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেন। এরপর তিনি
কুরআনুল কারীম হিফয সম্পন্ন করেন।[15]
অতঃপর উচ্চশিক্ষা অর্জন এবং হাদীছ
সংগ্রহের জন্য তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের
প্রায় প্রতিটি দেশ ও জনপদের যুগশ্রেষ্ঠ
মুহাদ্দিছদের দ্বারস্থ হয়েছেন। ইমাম ইবনু
মাজাহ ২৩০ হিজরী মোতাবেক ৮৪৪
খ্রীষ্টাব্দে ২২ বছর বয়সে হাদীছ সংগ্রহের
উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শহরের মুহাদ্দিছগণের
নিকটে গমন করেন।[16]
আল্লামা আবু যাহু ‘হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন’
গ্রন্থে লিখেছেন,
ﻭﺍﺭﺗﺤﻞ ﻟﻜﺘﺎﺑﺔ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺗﺤﺼﻴﻠﻪ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺮﻱ، ﻭﺍﻟﺒﺼﺮﺓ، ﻭﺍﻟﻜﻮﻓﺔ ﻭﺑﻐﺪﺍﺩ، ﻭﺍﻟﻰ
ﺍﻟﺸﺎﻡ ﻭﻣﺼﺮ ﻭﺍﻟﺤﺠﺎﺯ، ﻭﺃﺧﺬ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻋﻦ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺷﻴﻮﺥ ﺍﻷﻣﺼﺎﺭ -
‘ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) হাদীছ
লিপিবদ্ধকরণ এবং শিক্ষার্জনের জন্য রায়,
বছরা, কূফা, বাগদাদ, সিরিয়া, মিসর, হেজায
প্রভৃতি দেশ ও জনপদে ভ্রমণ করেন এবং বহু
মনীষীর নিকট থেকে হাদীছ সংগ্রহ করেন।[17]
আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী ও নওয়াব
ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী তাদের গ্রন্থে
লিখেছেন,
ﺍﺭﺗﺤﻞ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻌﺮﺍﻕ ﻭﺍﻟﺒﺼﺮﺓ ﻭﺍﻟﻜﻮﻓﺔ ﻭﺑﻐﺪﺍﺩ ﻭﻣﻜﺔ ﻭﺍﻟﺸﺎﻡ ﻭﻣﺼﺮ ﻭﺍﻟﺮﻱ
ﻟﻜﺘﺎﺑﺔ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ،
অর্থাৎ ‘হাদীছ সংগ্রহের জন্য ইমাম ইবনু
মাজাহ (রহঃ) ইরাক, বছরা, কূফা, বাগদাদ,
মক্কা, সিরিয়া, মিসর, রায় প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ
করেন’।[18]
ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ﺳﻤﻊ
ﺑﺨﺮﺍﺳﺎﻥ ﻭﺍﻟﻌﺮﺍﻕ ﻭﺍﻟﺤﺠﺎﺯ ﻭﻣﺼﺮ ﻭﺍﻟﺸﺎﻡ ﻭﻏﻴﺮﻫﻤﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻼﺩ ‘তিনি
খোরাসান, ইরাক, হেজায, মিসর, সিরিয়া
প্রভৃতি দেশের মনীষীদের নিকট থেকে
হাদীছ শুনেছেন’।[19] হাদীছ সংগ্রহের জন্য
কষ্টকর দেশ ভ্রমণের পরে তিনি ১৫ বছরের
অধিক সময় ইলম চর্চায় নিমগ্ন থাকেন।[20]
শিক্ষকমন্ডলী :
ইবনু মাজাহ (রহঃ) দেশ-বিদেশের অনেক
মনীষীর নিকট শিক্ষাগ্রহণ ও হাদীছ সংগ্রহ
করেছেন। তাঁর অসংখ্য উস্তাদের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হ’লেন- হাফেয আলী ইবনু
মুহাম্মাদ আত-তানাফিসী, জুরারাহ ইবনুল
মুগাল্লিস, মুসয়াব ইবনু আব্দুল্লাহ আয-
যুবাইরী, সুয়াইদ ইবনে সাঈদ, আব্দুল্লাহ ইবনু
মু‘আবিয়া আল-জুমাহী, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ,
ইবরাহীম ইবনুল মুনযির আল-হিফমী, মুহাম্মাদ
ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনে নুমাইর, আবু বকর ইবনু আবু
শায়বা, হিশাম ইবনু আম্মার, ইয়াযীদ ইবনু
আব্দুল্লাহ ইয়ামামী, আবু মুছ‘আব আয-যুহরী,
বিশর ইবনু মু‘আয আল-আকাদী, হুমাইদ ইবনু
মাসয়াদা, আবু হুযাফা আস-সাহমী, দাঊদ ইবনু
রুশাইদ, আবু খায়ছামা, আব্দুল্লাহ ইবনু
যাকওয়ান আল-মুকবেরী, আব্দুল্লাহ ইবনু আমের
ইবনে বাররাদ, আবু সাঈদ, আল-আমাযা, আব্দুর
রহমান ইবনু ইবরাহীম দুহাইম, আব্দুস সালাম
ইবনু আছেম আল-হিসিনজানী, ওছমান ইবনু আবু
শায়বা প্রমুখ।[21]
বহু মুহাদ্দিছের নিকট থেকে হাদীছ
শিক্ষাগ্রহণ ও সংগ্রহ করলেও ইমাম ইবনু
মাজাহ (রহঃ) তাঁর সবচেয়ে প্রিয়তম উস্তাদ
আবু বকর ইবনু আবু শায়বার নিকট থেকে সবচেয়ে
বেশী উপকৃত হয়েছেন।[22]
ছাত্রবৃন্দ :
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর অসংখ্য ছাত্রের
মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’লেন ইবরাহীম ইবনু
দীনার আল-হাওশাবী, আহমাদ ইবনু ইবরাহীম
আল-কাযভীনী (তিনি হাফেয আবু ইয়া‘লা
আল-খলীলীর দাদা), আবুত তাইয়্যেব আহমাদ
ইবনু রাওহিন আল-বাগদাদী আশ-শা‘রানী,
আবু আমর আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনে হাকীম
আল-মাদীনী আল-ইস্পাহানী, ইসহাক ইবনু
মুহাম্মাদ আল-কাযভীনী, জা‘ফর ইবনু ইদরীস,
হোসাইন ইবনু আলী ইবনে ইয়াযদানিয়ার,
সোলায়মান ইবনু ইয়াযীদ আল-কাযভীনী, আবুল
হাসান আলী ইবনু ইবরাহীম ইবনে সালামা
আল-কাযভীনী, আলী ইবনু সাঈদ ইবনে
আব্দুল্লাহ আল-আসকারী, মুহাম্মাদ ইবনু ঈসা
আছ-ছাফফার প্রমুখ।[23]
ইবনু মাজাহ (রহঃ) রচিত গ্রন্থাবলী :
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) বহু সংখ্যক গ্রন্থ
রচনা না করলেও যে তিনটি গ্রন্থ তিনি রচনা
করেছেন তা খুবই মূল্যবান, কল্যাণকামী ও
সুপ্রসিদ্ধ।
১. ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ (সুনানু ইবনি মাজাহ) : এটি কুতুবুস
সিত্তার অন্যতম একটি গ্রন্থ। মূলতঃ এ গ্রন্থ
সংকলনের মাধ্যমেই তিনি মুসলিম জাতির
হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।[24]
২. ﺗﻔﺴﻴﺮ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ (তাফসীরুল কুরআনিল কারীম) :
হাদীছের ভিত্তিতে রচিত এটি তাঁর একটি
মূল্যবান তাফসীর গ্রন্থ।[25]
৩. ﺗﺎﺭﻳﺦ ﻣﻠﻴﺢ (তারীখু মালীহ) : কোন কোন
মনীষী এ গ্রন্থটিকে ﺗﺎﺭﻳﺦ ﻛﺎﻣﻞ (তারীখু কামিল)
বলে উল্লেখ করেছেন। এটি নির্ভরযোগ্য তথ্য ও
তত্ত্বে ভরপুর একটি প্রামাণ্য ইতিহাসগ্রন্থ।
আল্লামা ইবনু কাছীর (রহঃ) ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺔ গ্রন্থে
লিখেছেন, ﻭﻻﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﺗﻔﺴﻴﺮ ﺣﺎﻓﻞ ﻭﺗﺎﺭﻳﺦ ﻛﺎﻣﻞ ﻣﻦ ﻟﺪﻥ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺇﻟﻰ
ﻋﺼﺮﻩ، ‘ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর রয়েছে একটি
পূর্ণাঙ্গ তাফসীর এবং পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসগ্রন্থ,
যাতে ছাহাবায়ে কেরামের যুগ হ’তে তাঁর
সময় পর্যন্ত বিস্তারিত ইতিহাস আলোচিত
হয়েছে’।[26]
এতদ্ব্যতীত ﺗﺎﺭﻳﺦ ﻗﺰﻭﻳﻦ (তারীখু কাযভীন)
গ্রন্থটিকে আল্লামা ইসমাঈল পাশা আল-
বাগদাদী স্বীয় ﻫﺪﻳﺔ ﺍﻟﻌﺎﺭﻓﻴﻦ নামক গ্রন্থে ইবনু
মাজাহ (রহঃ)-এর গ্রন্থ হিসাবে উল্লেখ
করেছেন।[27] কিন্তু কোন কোন মনীষী এ
গ্রন্থটিকে আবুল কাসেম রাফেঈর বলে অভিমত
পোষণ করেন।[28]
অনুসরণীয় মাযহাব :
ইবনু মাজাহ (রহঃ) নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের
অনুসারী ছিলেন কি-না এবং থাকলেও কোন
মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এ ব্যাপারে
মতভেদ রয়েছে। আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী
(রহঃ) বলেন, তিনি শাফেঈ মাযহাবের
অনুসারী ছিলেন।[29] শাহ ওয়ালিউল্লাহ
মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) বলেন, তিনি ইমাম
আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)-এর মাযহাবের
অনুসারী ছিলেন।[30] আল্লামা তাহির
জাযায়েরী বলেন, তিনি কোন মাযহাবের
অনুসারী ছিলেন না। তবে তাঁর ফিকহী
মাসআলায় ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ইবনে
হাম্বল (রহঃ), ইসহাক, আবু ওবায়দা প্রমুখ
মনীষীর সাথে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।[31]
আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী ‘তুহফাতুল
আহওয়াযী’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,
ﻛﻤﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻛﺎﻥ ﻣﺘﺒﻌﺎ ﻟﻠﺴﻨﺔ ﻋﺎﻣﻼ ﺑﻬﺎ ﻣﺠﺘﻬﺪﺍ ﻏﻴﺮ ﻣﻘﻠﺪ
ﻷﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻷﺋﻤﺔ ﺍﻷﺭﺑﻌﺔ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ﻛﺬﻟﻚ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ
ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﻛﻠﻬﻢ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻣﺘﺒﻌﻴﻦ ﻟﻠﺴﻨﺔ ﻋﺎﻣﻠﻴﻦ ﺑﻬﺎ ﻣﺠﺘﻬﺪﻳﻦ ﻏﻴﺮ ﻣﻘﻠﺪﻳﻦ ﻷﺣﺪ -
‘ইমাম বুখারী (রহঃ) যেমন সুন্নাতের অনুসারী
ও তদনুযায়ী আমলকারী এবং মুজতাহিদ
ছিলেন, ইমাম চতুষ্টয়ের বা অন্য কোন ইমামের
কোন একজনের অনুসারী ছিলেন না।
অনুরূপভাবে ইমাম মুসলিম, তিরমিযী, আবু
দাঊদ, নাসাঈ এবং ইবনু মাজাহ (রহঃ), তাঁরা
প্রত্যেকেই সুন্নাতের অনুসারী ও তদনুযায়ী
আমলকারী এবং মুজতাহিদ ছিলেন। তাঁরা
কেউ কোন ইমামের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না।[32]
আল্লামা শাবিবর আহমাদ ওছমানী
লিখেছেন,
ﻭﺍﻣﺎﻡ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﻓﻬﻢ ﻋﻠﻰ ﻣﺬﻫﺐ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ،
ﻟﻴﺴﻮﺍ ﻣﻘﻠﺪﻳﻦ ﻟﻮﺍﺣﺪ ﺑﻌﻴﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ .
‘ইমাম মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু
মাজাহ (রহঃ) প্রমুখ মুহাদ্দিছগণ আহলেহাদীছ
ছিলেন, তাঁরা কোন ইমামের মুক্বাল্লিদ
ছিলেন না’।[33] মূলতঃ তিনি কোন ব্যক্তি
বিশেষকে অনুসরণ করতেন না; বরং তিনি
নিজেই মুজতাহিদ ছিলেন।[34]
মৃত্যু :
ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর মৃত্যু তারিখ সম্পর্কে
মতভেদ রয়েছে। ইবনু কাছীর ও জামালুদ্দীন
ইউসুফ আল-মিযযী তাঁর মৃত্যু তারিখ, জানাযা
ও দাফনকার্য সম্পাদন সম্পর্কে বলেন,
ﻛﺎﻧﺖ ﻭﻓﺎﺓ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺈِﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻭَﺩُﻓِﻦَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﺜُّﻠَﺎﺛَﺎﺀِ ﻟِﺜَﻤَﺎﻥٍ ﺑَﻘِﻴْﻦَ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
ﺳَﻨَﺔَ ﺛَﻠَﺎﺙٍ ﻭَﺳَﺒْﻌِﻴْﻦَ ﻭَﻣِﺎﺋَﺘَﻴْﻦِ ﻋَﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ ﻭَﺳِﺘِّﻴْﻦَ ﺳَﻨَﺔً،
‘ইবনু মাজাহ (রহঃ) ২৭৩ হিজরী ২২ রামাযান
মোতাবেক ২০ নভেম্বর ৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে
সোমবার মৃত্যুবরণ করেন। পরের দিন মঙ্গলবার
তাঁকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স
হয়েছিল ৬৪ বছর।[35]
কেউ কেউ বলেন, তিনি ২৭৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ
করেন।[36]
ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি ২৭৩ হিজরী
রামাযান মাসে মৃত্যুবরণ করেন।[37] তবে প্রথম
অভিমতটিই অধিক বিশুদ্ধ।
তাঁকে গোসল করান মুহাম্মাদ ইবনে আলী
কেহেরমান এবং ইবরাহীম ইবনে দীনার।[38]
জানাযায় ইমামতি করেন স্বীয় ভাই আবু বকর
এবং কবরে লাশ নামান তার ভাই আবু বকর ও
আবু আব্দুল্লাহ এবং স্বীয় পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে
মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াযীদ।[39]
মনীষীদের দৃষ্টিতে ইবনু মাজাহ :
হাদীছ, তাফসীর, ইতিহাস শাস্ত্রে
অবিস্মরণীয় অবদান রাখার কারণে সমকালীন
ও পরবর্তী মনীষীগণ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা
করেছেন।
১. হাফেয আবু ইয়া‘লা আল-খলীল ইবনে
আব্দুল্লাহ আল-খলীল আল-কাযভীনী বলেন,
ﺛﻘﺔ ﻛﺒﻴﺮ ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﺤﺘﺞ ﺑﻪ ﻟﻪ ﻣﻌﺮﻓﺔ ﺑﺎﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺣﻔﻆ ﻭﻟﻪ ﻣﺼﻨﻔﺎﺕ ﻓﻲ
ﺍﻟﺴﻨﻦ ﻭﺍﻟﺘﻔﺴﻴﺮ ﻭﺍﻟﺘﺎﺭﻳﺦ
‘ইবনু মাজাহ (রহঃ) খুবই নির্ভরযোগ্য সর্বসম্মত
হাদীছবেত্তা ছিলেন। যাঁর হাদীছগুলো
প্রামাণ্য দলীল হিসাবে পেশ করা যায়।
হাদীছ সংকলক এবং সংরক্ষক হিসাবে তাঁর
রয়েছে বিশেষ পরিচিতি। তিনি সুনান,
তাফসীর ও ইতিহাস প্রণেতাও বটে।[40]
২. আল্লামা ইবনু কাছীর (রহঃ) ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺔ
গ্রন্থে লিখেছেন,
ﻭَﻫُﻮَﺻَﺎﺣِﺐُ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﺴُّﻨَﻦِ ﺍﻟْﻤَﺸْﻬُﻮﺭَﺓِ، ﻭَﻫِﻲَ ﺩَﺍﻟَّﺔٌ ﻋَﻠَﻰ ﻋﻤﻠﻪ ﻭﻋﻠﻤﻪ ﻭﺗﺒﺤﺮﻩ
ﻭﺍﻃﻼﻋﻪ ﻭﺍﺗﺒﺎﻋﻪ ﻟﻠﺴﻨﺔ ﻓﻲ ﺍﻷﺻﻮﻝ ﻭﺍﻟﻔﺮﻭﻉ،
‘তিনি ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ সুনান গ্রন্থপ্রণেতা,
যা তাঁর ইলম, আমল এবং সুন্নাতের অনুসরণ এবং
এর প্রতিটি মূল ও শাখায় অগাধ পান্ডিত্যের
সাক্ষ্য বহন করে।[41]
৩. ইমাম যাহাবী বলেন, ﻗﺪ ﻛﺎﻥ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﺣﺎﻓﻈﺎ ﻧﺎﻗﺪﺍ
ﺻﺎﺩﻗﺎ، ﻭﺍﺳﻊ ﺍﻟﻌﻠﻢ، ‘ইবনু মাজাহ (রহঃ) ছিলেন
হাদীছের হাফেয, রাবী সমালোচক, সত্যবাদী
এবং অগাধ জ্ঞানের অধিকারী’।[42]
৪. আল্লামা জালালুদ্দীন ইউসুফ আল-মিযযী
বলেন, ﺃﺑﻮ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﺍﻟﻘﺰﻭﻳﻨﻲ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺻﺎﺣﺐ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺫﻭ
ﺍﻟﺘﺼﺎﻧﻴﻒ ﺍﻟﻨﺎﻓﻌﺔ ﻭﺍﻟﺮﺣﻠﺔ ﺍﻟﻮﺍﺳﻌﺔ ‘হাফেয আবু আব্দুল্লাহ
ইবনু মাজাহ আল-কাযভীনী ছিলেন কিতাবুস
সুনানের সংকলক, কল্যাণকামী গ্রন্থপ্রণেতা
এবং গভীর পান্ডিত্যের অধিকারী’।[43]
তিনি আরো বলেন, ﻭﻛﺎﻥ ﻋﺎﺭﻓﺎ ﺑﻬﺬﺍ ﺍﻟﺸﺎﻥ ‘তিনি এ
জ্ঞানে অভিজ্ঞ ছিলেন’।[44]
৫. ইবনে খাল্লিকান বলেন, ﻭﻛﺎﻥ ﺇﻣﺎﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻋﺎﺭﻓﺎ
ﺑﻌﻠﻮﻣﻪ ﻭﺟﻤﻴﻊ ﻣﺎ ﻳﺘﻌﻠﻖ ﺑﻪ ‘তিনি হাদীছের ইমাম
এবং এ
সম্পর্কিত সকল বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী
ছিলেন’।[45]
৬. ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেন, ﺃﺑﻮ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ،
ﺍﻟﻘﺰﻭﻳﻨﻲ، ﻣﺼﻨﻒ ﺍﻟﺴﻨﻦ، ﻭﺍﻟﺘﺎﺭﻳﺦ ﻭ ﺍﻟﺘﻔﺴﻴﺮ، ﻭﺣﺎﻓﻆ ﻗﺰﻭﻳﻦ ﻓﻲ ﻋﺼﺮﻩ.
‘আবু আব্দুল্লাহ ইবনু মাজাহ সুনান, তারীখ ও
তাফসীর প্রণেতা এবং সমকালীন যুগে
কাযভীনের হাফেযুল হাদীছ ছিলেন’।[46]
৭. আল্লামা ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ)
বলেন, ﺃﺑﻮ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﺻﺎﺣﺐ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺃﺣﺪ ﺍﻷﺋﻤﺔ ﺣﺎﻓﻆ ‘আবু
আব্দুল্লাহ ইবনু মাজাহ সুনানগ্রন্থ সংকলক এবং
একজন বিশিষ্ট হাদীছ সংরক্ষক ইমাম ছিলেন।
[47]
৮. আল্লামা ইবনুল আছীর (রহঃ) বলেন, ﻛﺎﻥ ﻋﺎﻗﻼ
ﺍﻣﺎﻣﺎ ﻋﺎﻟﻤﺎ ‘তিনি একজন বুদ্ধিদীপ্ত আলেম ও
ইমাম ছিলেন’।[48]
==========
==========
==========
[1]. তারীখুত তাশরীঈল ইসলামী, পৃঃ ৯৫।
[2]. কাশফুয যুনূন আন-আসামিল কুতুবি ওয়াল
ফুনূন, ১/১০০৪ পৃঃ।
[3]. হাদিয়াতুল আরেফীন, ২/১৮ পৃঃ; মিফতাহুল
উলূম ওয়াল ফুনূন, পৃঃ ৬৮।
[4]. তাযকিরাতুল হুফফায, ২/৬৩৬ পৃঃ।
[5]. তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৩৯ পৃঃ।
[6] . তারীখুত তাশরীঈল ইসলামী, ৯৫ পৃঃ;
কাশফুয যুনূন, ১/১০০৪ পৃঃ; হাদিয়াতুল আরেফীন,
২/১৮ পৃঃ।
[7]. তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল,
২৭/৪১ পৃঃ।
[8]. তাযকিরাতুল হুফফায, ২/৬৩৬ পৃঃ; বুস্তানুল
মুহাদ্দিছীন, পৃঃ ২৪৬; মুকাদ্দামাতু তুহফাতিল
আহওয়াযী, ১/১০৯ পৃঃ।
[9]. আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ
সিত্তাহ, পৃঃ ২৫৫; মিফতাহুল উলূম ওয়াল ফুনূন,
পৃঃ ৬৮।
[10] . মুকাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী, ১/১১০
পৃঃ।
[11] . বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন, পৃঃ ২৪৬; আত-
তুহফাতু লিতালিবিল হাদীছ, পৃঃ ৫৭।
[12] . হাদিয়াতুল আরেফীন, ২/১৮ পৃঃ; আত
তুহফাতু লিতালিবিল হাদীছ, পৃঃ ৫৬।
[13] . হাদীস সংকলনের ইতিহাস, পৃঃ ৩৭৭।
[14]. ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) ওয়া কিতাবুহুস
সুনান : দিরাসাতুন তাতবিকিয়াহ, (সঊদী
আরব : প্রিন্সেস নূরা বিনতে আব্দুর রহমান
বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪৩৩-৩৪ হিঃ), পৃঃ ৩।
[15]. ঐ, পৃঃ ৪।
[16]. ঐ, পৃঃ ৪।
[17] . আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন, ৩৬১ পৃঃ।
[18] . মুকাদ্দামাহ তুহফাতুল আহওয়াযী, ১/১০৯
পৃঃ; আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ আস-
সিত্তাহ, পৃঃ ২৫৬।
[19] . তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৩৯ পৃঃ; তাহযীবুল
কামাল ফী আসমাইর রিজাল, ২৭/৪০ পৃঃ।
[20]. ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) ওয়া কিতাবুহুস
সুনান : দিরাসাতুন তাতবিকিয়াহ, পৃঃ ৪।
[21] . সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৩/২৭৭-৭৮ পৃঃ।
[22] . বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন, পৃঃ ২৪৬; আল-
হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ সিত্তাহ, পৃঃ
২৫৫।
[23] . তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল,
২৭/৪০-৪১ পৃঃ; তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৩৯ পৃঃ।
[24] . শাযারাতুয যাহাব ফী আখবারি মান
যাহাব, ২/১৬৪ পৃঃ।
[25] . আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ
সিত্তাহ, পৃঃ ২৫৬।
[26] . আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১১/৬১ পৃঃ;
তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল, ২৭/৪০
পৃঃ।
[27] . হাদিয়াতুল আরেফীন, ২/১৮ পৃঃ।
[28] . আত-তুহফাতু লিতালিবিল হাদীছ, পৃঃ ৬০।
[29] . মিফতাহুল উলূম ওয়াল ফুনূন, পৃঃ ৭০।
[30] . আত-তুহফাতু লিতালিবিল হাদীছ, পৃঃ ৫৭।
[31] . ঐ, পৃঃ ৫৭।
[32] . মুকাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী, ১/২৭৯
পৃঃ।
[33] . ঐ, ১/১০১ পৃঃ।
[34] . ঐ, ১/২৭৯ পৃঃ।
[35] . আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১১/৬১ পৃঃ।
[36] . তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৪০ পৃঃ।
[37] . সিয়ারু আলামিন লুবালা, ১৩/২৮৯ পৃঃ।
[38] . আত-তুহফাতু লি তালিবিল হাদীছ, পৃঃ
৬০।
[39] . মুক্কাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী,
১/১০৯ পৃঃ; শাযারাতুয যাহাব ফী আখবারি
মান যাহাব, ২/১৬৪ পৃঃ; আল-বিদায়া ওয়ান
নিহায়া, ১১/৬১ পৃঃ।
[40] . তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল,
২৭/৪১ পৃঃ; তাযকিরাতুল হুফফায, ২/৬৩৬ পৃঃ।
[41] . আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ, ১১/৬১ পৃঃ;
মা তামাসসু ইলাইহিল হাজা লিমান
ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৫।
[42] . সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৩/২৭৮ পৃঃ;
আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন, পৃঃ ৪২০।
[43] . তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল,
২৭/৪০ পৃঃ।
[44] . ঐ, ২৭/৪১ পৃঃ।
[45] . শাযারাতুয যাহাব ফী আখবারি মান
যাহাবা, ২/১৬৪ পৃঃ; মা তামাসসাসু ইলাইহিল
হাজা লিমান ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে
মাজাহ, পৃঃ ৩৪।
[46] . সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৩/২৭৭ পৃঃ।
[47] . তাক্বরীবুত তাহযীব, পৃঃ ৪৭৭।
[48] . মা তামাসসু ইলাইহিল হাজা লিমান
ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৪।
=====••••====
============
=====••••====
^
সুনানু ইবনে মাজাহ সংকলন :
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর দীর্ঘদিনের
কঠোর সাধনা ও অধ্যবসায়ের ফসল সুনানু ইবনে
মাজাহ। এটি কুতুবুস সিত্তার অন্যতম গ্রন্থ। এ
গ্রন্থটি সংকলন শেষে ইমাম ইবনু মাজাহ
(রহঃ) স্বীয় প্রখ্যাত উস্তাদ ইমাম আবু যুর‘আ
আর-রাযীর নিকট পেশ করলে তিনি চুলচেরা
বিশ্লেষণপূর্বক একে ইলমে হাদীছের এক অনন্য
সাধারণ ও উপকারী গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃতি
দেন। এ সম্পর্কে ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ)
বলেন, ﻋﺮﺿﺖ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻲ ﺯﺭﻋﺔ ﻓﻨﻈﺮ ﻓﻴﻪ، ﻭﻗﺎﻝ: ﺃﻇﻦ ﺇﻥ ﻭﻗﻊ
ﻫﺬﺍ ﻓﻲ ﺃﻳﺪﻱ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺗﻌﻄﻠﺖ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺠﻮﺍﻣﻊ ﺃﻭ ﺃﻛﺜﺮﻫﺎ، ‘আমি এ সুনান
গ্রন্থটির সংকলনকার্য সমাপনান্তে আমার
উস্তাদ আবু যুর‘আ আর-রাযীর নিকট পেশ করলে
তিনি সূক্ষ্মভাবে নিরীক্ষাপূর্বক মন্তব্য
করেন যে, আমি মনে করি এ সুনান গ্রন্থটি
জনসাধারণের হাতে পৌঁছলে বর্তমান পর্যন্ত
সংকলিত সবগুলো অথবা অধিকাংশ
হাদীছগ্রন্থ অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে।[1]
ইবনু মাজাহতে সংকলিত হাদীছ সংখ্যা :
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) লক্ষাধিক হাদীছ
যাচাই-বাছাই করে এ গ্রন্থটিতে মোট ৪৩৪১
টি হাদীছ লিপিবদ্ধ করেছেন। এর মধ্যকার
৩০০২ টি হাদীছ এমন যেগুলো পাঁচটি প্রসিদ্ধ
গ্রন্থের সবগুলোতে অথবা কোন কোনটিতে
রয়েছে। এছাড়া ১৩৩৯ টি হাদীছ ব্যতিক্রম।
যেগুলো কুতুবুস সিত্তার অন্য পাঁচজন গ্রন্থকার
বর্ণনা করেননি। এতে মোট ৩৭ টি অধ্যায় ও
১৫৪৫ টি পরিচ্ছেদ রয়েছে।[2]
হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ﻭﻳﺸﺘﻤﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﺛﻨﺘﻴﻦ
ﻭﺛﻼﺛﻴﻦ ﻛﺘﺎﺑﺎ، ﻭﺃﻟﻒ ﻭﺧﻤﺴﻤﺎﺋﺔ ﺑﺎﺏ، ﻭﻋﻠﻰ ﺃﺭﺑﻌﺔ ﺁﻻﻑ ﺣﺪﻳﺚ ‘এতে ৩২
টি অধ্যায়, ১৫০০ টি পরিচ্ছেদ এবং চার
সহস্রাধিক হাদীছ রয়েছে’।[3]
শু‘আইব আরনাউত সহ কোন কোন বিদ্বান বলেন,
সুনানু ইবনে মাজাহতে এককভাবে বর্ণিত
হাদীছ সংখ্যা পুনরাবৃত্তি সহ মোট ১২১৩ টি।
তন্মধ্যে ৯৮ টি ছহীহ, ১১৩ টি মুতাবি‘আতের
কারণে ছহীহ, ২১৯ টি শাওয়াহেদের কারণে
ছহীহ; ৫৮ টি হাদীছ হাসান, ৪২ টি
মুতাবি‘আতের কারণে হাসান, ৬৫ টি
শাওয়াহেদের কারণে হাসান, ৬ টি হাসান
হওয়ার সম্ভাবনাময়; ৭ টি হাদীছ মারফূ
হিসাবে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তা মাওকূফ
হিসাবে ছহীহ। ৪ টি হাদীছ মুরসাল, ৩৮৪ টি
হাদীছ যঈফ; ১৮৪ টি অত্যধিক যঈফ, ১ টি হাদীছ
শায; ২১ টি হাদীছ মুনকার ও মাওযূ‘ (জাল)। ১১
টি হাদীছের মান/স্তর নির্ণয় করা সম্ভব
হয়নি। এ পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয়েছে যে, ইবনু
মাজাহতে এককভাবে বর্ণিত পুনরাবৃত্তি
বিহীন ছহীহ এবং হাসান লিযাতিহী ও
হাসান লি গায়রিহী হাদীছ সংখ্যা মূলত ৬০০
টি।[4]
উল্লেখ্য যে, পান্ডুলিপির ভিন্নতার কারণে
হাদীছের সংখ্যা, পরিচ্ছেদ ও অধ্যায়ের
সংখ্যায় কম-বেশী পরিলক্ষিত হয়।
ইবনু মাজাহর বর্ণনাকারী : সুনানু ইবনে
মাজাহ গ্রন্থটি প্রধানত চারজন বিখ্যাত
মুহাদ্দিছের ধারাবাহিক বর্ণনা পরম্পরা
সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা হ’লেন, ১. আবুল
হাসান আলী ইবনু ইবরাহীম ইবনুল কাত্ত্বান,
২. সুলায়মান ইবনে ইয়াযীদ, ৩. আবু জা‘ফর
মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা, ৪. আবু বকর হামিদ আল-
আবরাহী।[5]
ইবনু মাজাহ-এর সত্যায়ন ও মূল্যায়ন :
ইলমে হাদীছে প্রসিদ্ধ জগৎ বিখ্যাত বিদ্বান
মন্ডলী সুনানু ইবনে মাজাহর ভূয়সী প্রশংসা
করেছেন। তাদের কয়েকজনের অভিমত নিম্নে
উল্লেখ করা হ’ল।-
১. সুনানু ইবনে মাজাহ সংকলনের পর তৎকালীন
জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আবু যুর‘আ আর-রাযীর
নিকট পেশ করা হ’লে তিনি একে অতি
মূল্যবান গ্রন্থ হিসাবে সত্যায়ন করেন। তিনি
বলেন, ‘আমি আবু আব্দুল্লাহ ইবনু মাজাহর
হাদীছ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করেছি। কিন্তু এতে খুব
অল্প হাদীছই এমন পেয়েছি যাতে কিছুটা
ত্রুটি রয়েছে। তাছাড়া আর কোন দোষ আমি
পাইনি। অতঃপর এ পর্যায়ে তিনি দশটির মত
হাদীছ উল্লেখ করেন’।[6]
২. ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ﻛﺘﺎﺑﻪ
ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺟﺎﻣﻊ ﺟﻴﺪ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻷﺑﻮﺍﺏ ﻭﺍﻟﻐﺮﺍﺋﺐ، ‘ইমাম ইবনু মাজাহ
(রহঃ) কর্তৃক সংকলিত সুনান গ্রন্থটি ব্যাপক
হাদীছ সংবলিত ও উত্তম। এতে অনেকগুলো
অধ্যায় ও দুষ্প্রাপ্য হাদীছ রয়েছে’।[7]
৩. হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ﻫﻮ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﻔﻴﺪ
ﻗﻮﻱ ﺍﻟﺘﺮﺗﻴﺐ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻘﻪ ‘এটি উপকারী গ্রন্থ, ফিক্বহের
দৃষ্টিতে এর অধ্যায়সমূহ সুদৃঢ়ভাবে সজ্জিত’।[8]
এ গ্রন্থটি দু’দিক দিয়ে কুতুবুস সিত্তাহর মধ্যে
বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। এর রচনা,
সংযোজন, সজ্জায়ন ও সৌকর্য অনন্য। এতে
হাদীছসমূহ এক বিশেষ পদ্ধতিতে ও অধ্যায়
ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে। অন্য কোন
কিতাবে সাধারণত এই সৌন্দর্য দেখা যায়
না।
৪. শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী ইবনে
মাজাহ গ্রন্থের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে
বলেছেন,
ﻭﻓﻲ ﺍﻟﻮﺍﻗﻊ ﺍﺯ ﺣﺴﻦ ﺗﺮﺗﻴﺐ ﻭﺳﺮﺩ ﺍﺣﺎﺩﻳﺚ ﺑﮯ ﺗﻜﺮﺍﺭ
ﻭﺍﺧﺘﺼﺎﺭ ﺁﻧﭽﻪ ﺍﻳﮟ ﻛﺘﺎﺏ ﺩﺍﺭﺩ ﮨﻴﭻ ﺍﻳﻚ ﺍﺯ ﻛﺘﺐ ﻧﺪﺍﺭﺩ
‘প্রকৃতপক্ষে সজ্জায়ন-সৌন্দর্য ও পুনরাবৃত্তি
ব্যতীত হাদীছসমূহ একের পর এক উল্লেখ করা
এবং তদুপরি সংক্ষিপ্ততা প্রভৃতি বিশেষত্ব এ
কিতাবে যা পাওয়া যায়, অপর কোন কিতাবে
তা দুর্লভ’।[9]
৫. আল্লামা আবুল হাসান সিন্ধী বলেন, ﻛﺎﻥ
ﺍﻟﻤﺼﻨﻒ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺗﺒﻊ ﻣﻌﺎﺫﺍ ﺣﻴﺚ ﺃﺧﺮﺝ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺘﻮﻥ ﻓﻲ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ
ﺍﻷﺑﻮﺍﺏ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺔﺏ ﺍﻟﺨﻤﺴﺔ ﺍﻟﻤﺸﻬﻮﺭﺓ - ‘গ্রন্থকার এ
গ্রন্থে মু‘আয ইবনে জাবালের রীতি অনুসরণ
করেছেন। অনেকগুলো অধ্যায়ে তিনি এমন সব
হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন, যা অপর প্রসিদ্ধ পাঁচটি
ছহীহ গ্রন্থে পাওয়া যায় না’।
মু‘আযের রীতি অনুসরণ করার অর্থ এই যে, মু‘আয
(রাঃ) প্রায়ই এমন সব হাদীছ বর্ণনা করতেন,
যা অন্যান্য ছাহাবীর শ্রুতিগোচর হয়নি।
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) তাঁর এ গ্রন্থে
অন্যান্য গ্রন্থের মোকাবেলায় এরূপ অনেক
হাদীছ এককভাবে বর্ণনা করেছেন।[10]
৬. আবু যাহু ‘আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন’
গ্রন্থে লিখেছেন, ﻛﺘﺎﺏ ﻣﻔﻴﺪ ﻋﻈﻴﻢ ﺍﻟﻨﻔﻊ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻘﻪ ‘ইমাম
ইবনু মাজাহ (রহঃ) সংকলিত সুনানু ইবনে
মাজাহ গ্রন্থটি ফিক্বহী মাসআলা চয়নে
উপকারী গ্রন্থ’।[11]
৭. ইবনুল আছীর প্রায় একই ধরনের মন্তব্য
করেছেন। তিনি বলেন, ﻛﺘﺎﺑﻪ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﻔﻴﺪ، ﻗﻮﻱ ﺍﻟﻨﻔﻊ ﻓﻲ
ﺍﻟﻔﻘﻪ، ‘ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর এ গ্রন্থটি
খুবই উপকারী, ফিক্বহী মাসআলা সঞ্চয়নে এটি
অত্যন্ত হিতকর’।[12]
৮. ড. ছুবহি ছালেহ ‘কুতুবুস সিত্তার’
কিতাবগুলোর দুর্লভ বৈশিষ্ট্যাবলী
আলোচনার ধারাবাহিকতায় লিখেছেন, ﻭﻣﻦ ﻛﺎﻥ
ﻳﻌﻨﻴﻪ ﺣﺴﻦ ﺍﻟﺘﺒﻮﻳﺐ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻘﻪ ﻓﺎﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﻳﻠﺒﻰ ﺭﻏﺒﺘﻪ - অর্থাৎ ‘যে
ব্যক্তি হাদীছশাস্ত্রে ফিক্বহী সজ্জায়ন,
সৌকর্য অন্বেষণ করে, সুনানু ইবনে মাজাহ তার
চাহিদা পূরণে সক্ষম’।[13]
কুতুবুস সিত্তায় সুনানু ইবনে মাজাহ-এর স্থান :
সুনানু ইবনে মাজাহ কুতুবুস সিত্তার অন্তর্ভুক্ত
কিতাব কি-না এ ব্যাপারে মনীষীদের মাঝে
মতানৈক্য রয়েছে। এ সম্পর্কে বিদ্বানগণের
মতামত নিম্নে পেশ করা হ’ল।-
১. আবু যাহু ‘আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন’
গ্রন্থে লিখেছেন, ‘পূর্ববর্তীকালের
মুহাদ্দিছগণ এবং পরবর্তীকালের মুহাক্কিকগণ
হাদীছশাস্ত্রের পাঁচটি কিতাবকে মৌলিক
গ্রন্থ হিসাবে গণ্য করেছেন। সেগুলো হ’ল
ছহীহাইন (ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম),
সুনানু নাসাঈ, সুনানু আবূদাঊদ ও জামে
তিরমিযী। পরবর্তীকালের কিছু সংখ্যক
মুহাদ্দিছ উল্লিখিত পাঁচটির সাথে সুনানু
ইবনে মাজাহকে সংযোজন করে ছয়টি গ্রন্থকে
মৌলিক হিসাবে গণ্য করেছেন। কেননা তারা
অভিমত পোষণ করেন যে, ইমাম ইবনু মাজাহ
(রহঃ)-এর এ গ্রন্থটি খুবই উপকারী এবং
ফিক্বহী মাসআলা সঞ্চয়নে অত্যন্ত ফলদায়ক।
হাফেয আবুল ফযল মুহাম্মাদ ইবনে তাহির আল-
মাকদেসী (মৃত্যু ৫০৭ হিঃ) ‘শুরূতুল আইম্মাতিস
সিত্তাহ’ ও ‘আতরাফুল কুতুবিস সিত্তাহ’ নামক
গ্রন্থদ্বয়ে সুনানে ইবনে মাজাহকে সর্বপথম
উল্লিখিত পাঁচটি গ্রন্থের সাথে যুক্ত করেন।
অতঃপর আব্দুল গণী নাবালুসীও স্বীয় ﺫﺧﺎﺋﺮ ﺍﻟﻤﻮﺍﺭﻳﺚ
ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻻﻟﺔ ﻋﻠﻰ ﻣﻮﺍﺿﻊ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ নামক গ্রন্থে একে
উল্লিখিত পাঁচটি গ্রন্থের সাথে যুক্ত করেন।
[14]
পরবর্তীকালের অনেক মুহাদ্দিছ তাঁদের সঙ্গে
একমত পোষণ করেন। কিন্তু ইবনু সাকান, ইবনু
মানদাহ, মুহাদ্দিছ রাযীন, ইবনুল আছীর এবং
আবু জা‘ফর ইবনে যুবায়ের প্রমুখ আলেমগণের
মতে কুতুবুস সিত্তার ষষ্ঠ গ্রন্থ হচ্ছে
মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক।[15]
২. আব্দুল গণী নাবালুসী ﺫﺧﺎﺋﺮ ﺍﻟﻤﻮﺍﺭﻳﺚ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻻﻟﺔ ﻋﻠﻰ
ﻣﻮﺍﺿﻊ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ নামক গ্রন্থে লিখেছেন, ﻭﻗﺪ ﺍﺧﺘﻠﻒ ﻓﻲ
ﺍﻟﺴﺎﺩﺱ ﻓﻌﻨﺪ ﺍﻟﻤﺸﺎﺭﻗﺔ ﻫﻮ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﻷﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ
ﺍﻟﻘﺰﻭﻳﻨﻲ، ﻭﻋﻨﺪ ﺍﻟﻤﻐﺎﺭﺑﺔ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻤﻮﻃﺄ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﻦ ﺃﻧﺲ، ‘কুতুবুস
সিত্তার ষষ্ঠ গ্রন্থ কোনটি এ ব্যাপারে
মতভেদ রয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় আলেমগণের
নিকট ষষ্ঠ গ্রন্থ হচ্ছে সুনানু ইবনে মাজাহ। আর
পশ্চিমাঞ্চলীয় আলেমগণের মতে, ষষ্ঠ গ্রন্থ
মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক’।[16]
৩. আবার কারো মতে, মুসনাদে দারেমীকে
কুতুবুস সিত্তার ষষ্ঠ গ্রন্থ গণ্য করা উচিত।
কেননা এতে দুর্বল বর্ণনাকারীদের সংখ্যা কম,
শায ও মুনকার হাদীছ দুর্লভ। যদিও এতে মুরসাল
ও মাওকূফ পর্যায়ের কিছু হাদীছ রয়েছে।
তথাপিও এটি সুনানু ইবনে মাজাহ-এর চেয়ে
অগ্রগণ্য।[17]
৪. হাজী খলীফা ‘কাশফুয যুনূন’ গ্রন্থে,
আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী ‘তুহফাতুল
আহওয়াযী’ গ্রন্থে, নওয়াব ছিদ্দীক হাসান
খান ভূপালী ‘আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ
ছিহাহ আস-সিত্তাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন ﻭﺃﻣﺎ ﺳﻨﻦ
ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﻓﻬﻮ ﺳﺎﺩﺱ ﺍﻟﺴﺘﻪ ‘সুনানু ইবনে মাজাহ কুতুবুস
সিত্তার ষষ্ঠ গ্রন্থ’।[18]
৫. আবুল হাসান সিন্ধী বলেন, ﻭﺑﺎﻟﺠﻤﻠﺔ ﻓﻬﻮ ﺩﻭﻥ ﺍﻟﻜﺘﺐ
ﺍﻟﺨﻤﺴﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﺗﺒﺔ ‘মোটকথা সুনানু ইবনে মাজাহ-এর
অবস্থান অপর পাঁচটি গ্রন্থের পরে’।[19]
৬. ড. ছুবহি ছালেহ স্বীয় ‘উলূমুল হাদীছ ওয়া
মুছতলাহুহূ’ গ্রন্থে কুতুবুস সিত্তার ধারাক্রম
লিখেছেন এভাবে, ﻭﺃﻣﺎ ﻛﺘﺐ ﺍﻟﺼﺤﺎﺡ ﻓﻬﻲ ﺗﺸﺘﻤﻞ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﺍﻟﺴﺘﺔ
ﻟﻠﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ ﻭﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ، ‘ছহীহ
গ্রন্থগুলির মধ্যে পরিগণিত কিতাবগুলো হ’ল,
বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ
ও ইবনু মাজাহ।[20]
৭. মা‘আরিফুস সুনান প্রণেতার মতে, কুতুবুস
সিত্তার প্রথম স্তরে রয়েছে ছহীহ বুখারী,
অতঃপর ছহীহ মুসলিম, অতঃপর সুনানু আবূদাঊদ,
সুনানু নাসাঈ অতঃপর জামে‘ তিরমিযী, এরপর
সুনানু ইবনে মাজাহ।[21]
৮. আল্লামা সাখাভী বলেন, ﻭﻗﺪﻣﻮﻩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻮﻃﺄ ﻟﻜﺜﺮﺓ
ﺯﻭﺍﺋﺪﻩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺨﻤﺴﺔ ﺑﺨﻼﻑ ﺍﻟﻤﻮﻃﺄ ‘বিদ্যানগণ ইবনু
মাজাহকে মুওয়াত্ত্বার উপরে প্রাধান্য
দিয়েছেন। এতে অন্যান্য পাঁচটি গ্রন্থের চেয়ে
অতিরিক্ত (যাওয়ায়েদ) হাদীছ থাকার
কারণে, কিন্তু মুওয়াত্ত্বা এর ব্যতিক্রম’।[22]
৯. মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম বলেন, ﻭﺃﻣﺎ ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ
ﻣﺎﺟﻪ ﻓﺎﻧﻬﺎ ﺩﻭﻥ ﻫﺬﻳﻦ ﺍﻟﺠﺎﻣﻌﻴﻦ (ﻳﻌﻨﻲ ﻛﺘﺎﺏ ِﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ)
অর্থাৎ সুনানু ইবনে মাজাহ, সুনানু আবু দাঊদ ও
সুনানু নাসাঈর পরে গণ্য হয়।[23]
১০. আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ বলেন, ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ
ﺳﺎﺩﺱ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﺍﻟﺴﺘﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﻟﻤﺸﻬﻮﺭ ﻭﻫﻮ ﺃﻗﻠﻬﺎ ﺩﺭﺟﺔ، ‘প্রসিদ্ধ
অভিমত অনুসারে সুনানু ইবনু মাজাহ কুতুবুস
সিত্তার ৬ষ্ঠ গ্রন্থ এবং মর্যাদার দিক দিয়ে
সর্ব নিম্নে’।[24]
যঈফ ও মাওযূ প্রসঙ্গ :
ইবনু মাজাহকে ‘কুতুবুস সিত্তাহ’-এর মধ্যে
পরিগণিত করা হ’লেও এ কথা ধ্রুব সত্য যে,
সুনানু ইবনে মাজাহ গ্রন্থে অনেকগুলো যঈফ ও
মাওযূ হাদীছের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এ সম্পর্কে
মুহাদ্দিছগণের কিছু উক্তি নিম্নে পেশ করা
হ’ল।-
১. আবু যুর‘আ ইবনু মাজাহ সম্পর্কে বলেছেন, ﻟﻌﻠﻪ
ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻴﻪ ﺗﻤﺎﻡ ﺛﻼﺛﻴﻦ ﺣﺪﻳﺜﺎ ﻣﻤﺎ ﻓﻲ ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺿﻌﻒ، অর্থাৎ এ
কিতাবে প্রায় ত্রিশটি হাদীছের সনদে
দুর্বলতা আছে’।[25]
২. আল্লামা ইবনুল হাম্দ বলেন, ﻛﺘﺎﺑﻪ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﻋﻠﻰ ﺛﻼﺛﻴﻦ
ﺣﺪﻳﺜﺎ ﻓﻰ ﺍﻟﺴﻨﺎﺩﻩ ﺿﻌﻔﻪ ‘ইবনু মাজাহতে ত্রিশটি
হাদীছ দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে’।[26]
৩. ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,
সুনানু ইবনে মাজাহ গ্রন্থটি ব্যাপক হাদীছ
সংবলিত এবং উত্তম গ্রন্থ। এতে অনেকগুলো
অধ্যায় এবং দুর্লভ হাদীছ রয়েছে। এতে অনেক
যঈফ হাদীছ রয়েছে। এমনকি এ মর্মে আমার
নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, আল্লামা সিসরী
(আবুল হাসান সিররী ইবনুল মুগাল্লাস) বলতেন,
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) যে সকল হাদীছ
এককভাবে বর্ণনা করেছেন তার অধিকাংশই
যঈফ। এ ব্যাপারে এটাই আমার সাধারণ
স্বীকৃতি নয়। এতে অনেক মুনকার হাদীছও
রয়েছে।[27]
৪. জালালুদ্দীন আবুল হাজ্জাজ ইউসুফ আল-
মিযযী বলেন, ‘যে সকল হাদীছ ইমাম ইবনু
মাজাহ (রহঃ) এককভাবে স্বীয় কিতাবে
সন্নিবেশ করেছেন সেগুলো যঈফ। অর্থাৎ কুতুবুস
সিত্তার অপর পাঁচজন মুহাদ্দিছ যে সকল
হাদীছ সন্নিবেশ করেননি, কিন্তু ইমাম ইবনু
মাজাহ (রহঃ) এককভাবে সন্নিবেশ করেছেন
সেগুলো যঈফ’।[28]
৫. জালালুদ্দীন সুয়ূতী বলেন, ইমাম ইবনু
মাজাহ (রহঃ) স্বীয় কিতাবে এককভাবে এমন
কিছু ব্যক্তি থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন,
যারা মিথ্যাবাদিতা ও হাদীছ চুরির
অভিযোগে অভিযুক্ত।[29]
৬. ইমাম যাহাবী স্বীয় ‘তাযকিরাতুল হুফফায’
গ্রন্থে লিখেছেন, ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺘﺎﺏ ﺣﺴﻦ، ﻟﻮﻻ ﻣﺎ ﻛﺪﺭ
ﻣﻦ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻭﺍﻫﻴﺔ ﻟﻴﺴﺖ ﺑﺎﻟﻜﺜﻴﺮﺓ، অর্থাৎ আবু আব্দুল্লাহ ইবনু
মাজাহ (রহঃ)-এর সুনান গ্রন্থটি খুবই সুন্দর
যদি না তাকে নিকৃষ্ট পর্যায়ের কিছু হাদীছ
নোংরা না করত, তবে তা অধিক নয়।[30]
৭. ইবনুল আছীর বলেন, ‘ইমাম ইবনু মাজাহ
(রহঃ)-এর এ গ্রন্থটি খুবই উপকারী, ফিক্বহী
মাসআলা সঞ্চয়নে অত্যন্ত হিতকর। কিন্তু এতে
এমন অনেক হাদীছ রয়েছে, যা খুবই যঈফ, বরং
মুনকার।[31]
৮. মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম ‘তানকীহুল
আনযার’ গ্রন্থে লিখেছেন, সুনানু ইবনে
মাজাহ, সুনানে আবূদাঊদ ও নাসাঈর পরবর্তী
পর্যায়ের গ্রন্থ। এ গ্রন্থের হাদীছ সমূহে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো আবশ্যক। এ
গ্রন্থের ফযীলত সংক্রান্ত অধ্যায়ে মাওযূ
হাদীছ রয়েছে।[32]
৯. আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) ‘তুহফাতুল
আহওয়াযী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ﻭﻓﻴﻪ ﺣﺪﻳﺚ ﻓﻲ
ﻓﻀﻞ ﻗﺰﻭﻳﻦ ﻣﻨﻜﺮ ﺑﻞ ﻣﻮﺿﻮﻉ ‘সুনানু ইবনে মাজাহতে
কাযভীন শহরের মর্যাদা সম্পর্কে একটি
মুনকার; বরং মাওযূ হাদীছ রয়েছে’।[33]
মান্না‘ খলীল আল-কাত্ত্বান ‘তারীখুত
তাশরীঈল ইসলামী’ গ্রন্থে লিখেছেন, ﻭﻗﺪ ﺃﺧﺮﺝ
ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻭﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﻀﻌﻴﻒ، অর্থাৎ ইমাম ইবনু
মাজাহ (রহঃ) সুনানু ইবনে মাজাহতে ছহীহ,
হাসান, যঈফ হাদীছ সন্নিবেশ করেছেন।[34]
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ আল্লামা নাছীরুদ্দীন
আলবানী (রহঃ)-এর সূক্ষ্ম তাহক্বীক্ব
অনুপাতে ইবনু মাজাহ গ্রন্থ আমল অযোগ্য,
দুর্বল ও ভিত্তিহীন হাদীছের সংখ্যা ৮৭৬টি।
মূলতঃ সুনানু ইবনে মাজাহতে ঐ পরিমাণ দুর্বল
হাদীছ থাকাটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়।
শায়খ আলবানী ছাড়াও সুনানু ইবনে মাজাহ-
এর অনেক বিজ্ঞ ব্যাখ্যাকার তাঁদের ব্যাখ্যা
গ্রন্থাবলীতে সুনানু ইবনে মাজাহ-এর বহু
হাদীছকে দুর্বল হিসাবে চিহ্নিত করেছেন
এবং বহু সনদের দোষণীয় দিক তুলে ধরেছেন।
শায়খ আলবানীর পূর্বেকার অনেক খ্যাতনামা
মুহাদ্দিছও ইবনু মাজাহতে অধিক পরিমাণ
দুর্বল হাদীছ থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।
ইমাম ইবনু মাজাহ যেসব হাদীছ এককভাবে
বর্ণনা করেছেন কেবল সে পর্যায়ের ১৩৩৯ টি
হাদীছের সমন্বয়ে আল্লামা বুছীরী ﻣﺼﺒﺎﺡ ﺍﻟﺰﺟﺎﺟﺔ
ﻓﻲ ﺯﻭﺍﺋﺪ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ - গ্রন্থ রচনা করে সেখানে ৪২৮টি
হাদীছকে হাসান ও ৬১৩টি হাদীছের সনদকে
যঈফ তথা দুর্বল এবং ৯৯টি হাদীছের সনদকে
মুনকার ও মিথ্যাবাদীদের বলে চিহ্নিত
করেছেন। অর্থাৎ আল্লামা বুছীরী-এর
তাহক্বীক্ব মোতাবেক সুনানু ইবনে মাজাহ-এর
শুধু একক বর্ণনাগুলোতেই ৭১২টি হাদীছ দুর্বল,
বাজে ও মিথ্যুকদের সনদে বর্ণিত।
রিজালশাস্ত্রের বিখ্যাত পন্ডিত ইমাম
যাহাবী (রহঃ) বলেছেন, সুনানু ইবনে
মাজাহতে দলীলের অযোগ্য হাদীছের
সংখ্যা
প্রায় ১০০০ টি।[35]
সুনানু ইবনে মাজাহ-এর বৈশিষ্ট্যাবলী :
সুনানু ইবনে মাজাহ-এর এমন কিছু দুর্লভ ও
অনুপম বৈশিষ্ট্য আছে, যা একে অন্যান্য হাদীছ
গ্রন্থাবলী থেকে পৃথক করেছে। যেমন-
১. দীর্ঘ ভূমিকা সংযোজন : এ গ্রন্থটি দীর্ঘ
ভূমিকা দ্বারা আরম্ভ হয়েছে। যাতে দ্বীনের
মূলনীতি, তাওহীদ ও সুন্নাতের মহত্ত্ব
সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ ভূমিকার
মধ্যে প্রায় ২৩৭ টি হাদীছ সন্নিবেশিত
হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অন্যান্য সুনান
গ্রন্থের মধ্যে একে অনন্য বিশেষত্ব দান
করেছে।
২. ফিক্বহী তারতীব অনুযায়ী বিন্যস্ত : সুনানু
ইবনে মাজাহকে অপূর্ব ফিক্বহী তারতীব
অনুযায়ী সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। এ সম্পর্কে
হাফেয ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, এটি একটি
উপকারী গ্রন্থ। ফিকহী দৃষ্টিকোণে এর
অধ্যায়সমূহ খুবই সুন্দর ও মযবূত করে সাজানো
হয়েছে।[36]
২. মাসআলা সঞ্চয়নে সহায়ক : কুতুবুস সিত্তার
অপরাপর গ্রন্থের তুলনায় এ গ্রন্থ থেকে
ফিক্বহী মাসআলা সঞ্চয়ন খুবই সহজসাধ্য। এ
সম্পর্কে ইবনুল আছীর বলেন, ﻛﺘﺎﺑﻪ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﻔﻴﺪ ﻗﻮﻱ ﺍﻟﻨﻔﻊ
ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻘﻪ، ‘ইমাম ইবনু মাজাহ সংকলিত এ গ্রন্থটি
খুবই কল্যাণপ্রদ এবং ফিক্বহী মাসআলা
সঞ্চয়নে অত্যন্ত উপকারী।[37]
৩. ইত্তেবায়ে সুন্নাত দ্বারা অনুচ্ছেদ শুরু :
সুনানু ইবনে মাজাহর অনুচ্ছেদ বিন্যাস শুরু
হয়েছে ‘ইত্তেবায়ে সুন্নাত’ শীর্ষক পরিচ্ছেদ
দ্বারা। যাতে ঐ সকল হাদীছ সংযোজিত
হয়েছে, যা দ্বারা সুন্নাত বা হাদীছের
প্রামাণিকতা, তার অনুসরণ ও সে অনুযায়ী
আমল করার আবশ্যকতা প্রমাণিত হয়।[38]
৪. প্রায় তাকরারমুক্ত : এ গ্রন্থে হাদীছ
সন্নিবেশের ক্ষেত্রে তাকরারনীতি
যথাসম্ভব পরিহার করা হয়েছে। বিশেষ
প্রয়োজন ও ক্ষেত্র ছাড়া কোন হাদীছ
তাকরার বা পুনরাবৃত্তি করা হয়নি।[39]
৫. ছুলাছিয়াত হাদীছ : হাদীছশাস্ত্রে
ছুলাছিয়াত তথা তিনজন রাবীর মধ্যস্থতায়
বর্ণিত হাদীছের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম।
এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত পাঁচটি ছুলাছিয়াত
হাদীছ এর গুরুত্ব ও মর্যাদাকে বৃদ্ধি করেছে।
[40]
৬. দুর্লভ হাদীছ সন্নিবেশ : এ গ্রন্থে এমন কিছু
দুর্লভ হাদীছ সন্নিবেশ করা হয়েছে, যা কুতুবুস
সিত্তার অন্য কোন গ্রন্থে নেই। যার ফলে এ
গ্রন্থটির মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা বেশী।
৭. রাবী পরিচিতি : এ গ্রন্থে হাদীছ বর্ণনা
শেষে অনেক ক্ষেত্রেই রাবী পরিচিতির
লক্ষ্যে রাবী সম্পৃক্ত শহরের নাম উল্লেখ করা
হয়েছে। এটি সুনানু ইবনে মাজাহ-এর এক অনন্য
বৈশিষ্ট্য। যেমন ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻗﺎﻝ ﺃﺗﻰ ﺭﺟﻞ ﻳﻘﺎﻝ ﺍﻟﺦ এ
হাদীছটি বর্ণনা শেষে মন্তব্য করেছেন যে, ﻫﺬﺍ
ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻟﺮﻣﻠﻴﻴﻦ ﻟﻴﺲ ﺇﻻ ﻋﻨﺪﻫﻢ ‘এই হাদীছটি
ফিলিস্তীনের রামলাবাসী রাবী কর্তৃক
বর্ণিত। তাদের ছাড়া অন্য কোন রাবীর নিকট
থেকে এ হাদীছটি পাওয়া যায় না’।[41]
৮. রাবীর দোষ-গুণ বর্ণনা : ইমাম ইবনু মাজাহ
(রহঃ) এ গ্রন্থে হাদীছ বর্ণনা শেষে
ক্ষেত্রবিশেষ রাবীর দোষগুণের বর্ণনাও পেশ
করেছেন। যেমন কোন এক হাদীছ বর্ণনা শেষে
মন্তব্য করেছেন, ‘আবু আব্দুল্লাহ গরীব, তার
থেকে কেবল ইবনু আবী শায়বা ব্যতীত কেউ
হাদীছ বর্ণনা করেননি।[42]
৯. শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ উপকারী : এ
গ্রন্থে অনেক যঈফ ও মাওযূ‘ হাদীছ উল্লিখিত
হয়েছে। যেগুলিকে হাদীছ হিসাবে গন্য করা
হ’লেও তা আমলযোগ্য নয়। কিন্তু যখন তার
মুতাবি‘আত ও শাওয়াহেদ পাওয়া যাবে তখন
তা হাসান লিগায়রিহী স্তরে উন্নীত হবে
এবং তার উপর আমল করা যাবে। শিক্ষার্থীরা
এসব বর্ণনা জেনে ও উছূলের নিয়ম অবগত হয়ে
উপকৃত হবে।
পরিশেষে বলব, সুনানু ইবনে মাজাহ ‘কুতুবুস
সিত্তাহ’ তথা ছয়টি শীর্ষ হাদীছ গ্রন্থের
মধ্যে একটি। যদিও এর মধ্যে অনেক জাল ও যঈফ
হাদীছের সন্নিবেশ ঘটেছে। তারপরও এ
গ্রন্থের রচনাশৈলী ও অধ্যায় বিন্যাস অনন্য।
মহান আল্লাহ এই গ্রন্থের বিশুদ্ধ
হাদীছগুলোকে আমাদের আমলী যিন্দেগীতে
বাস্তবায়নের তাওফীক দান করুন-আমীন!!
`
`
লেখক: কামরুযযামান বিন আব্দুল বারী
`
`
[1]. মুক্বাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী, ১/১০৮
পৃঃ; আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ আস-
সিত্তাহ, পৃঃ ২২০-২১।
[2]. শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী, যঈফু সুনানে
ইবনে মাজাহ, অনুবাদ : আহসানুল্লাহ বিন
সানাউল্লাহ (ঢাকা : শায়খ আলবানী
একাডেমী, ডিসেম্বর ২০০৬), পৃঃ ৮।
[3]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১১/৬১ পৃঃ;
আত-তুহফাতু লিতালিবিল হাদীছ, পৃঃ ৫৫।
[4]. সুনান ইবনু মাজাহ, তাহক্বীক্ব : শু‘আইব
আরনাউত ও অন্যান্য (তাবা‘আতুর রিসালাতিল
আলাইয়াহ, ১ম প্রকাশ, ১৪৩০ হিঃ), ভূমিকা
দ্রঃ ।
[5]. তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৪০ পৃঃ।
[6] . মা তামাসসু ইলাইহিল হাজা লিমান
ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৭।
[7]. তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৪০ পৃঃ; মা
তামাসসু ইলাইহিল হাজা লিমান ইউতালিয়ু
সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৮।
[8]. ঐ, পৃঃ ৩৫।
[9]. বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন, পৃঃ ২৪৬; হাদীস
সংকলনের ইতিহাস, পৃঃ ৩৯৬।
[10] . ঐ, পৃঃ ৩৯৭।
[11] . আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন, পৃঃ ৪১৮।
[12] . ঐ, পৃঃ ৪১৮।
[13] . উলূমুল হাদীছ ওয়া মুছত্বালাহুহূ, পৃঃ ১১৯।
[14] . আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিসুন, পৃঃ ৪১৮;
আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ সিত্তাহ,
পৃঃ ২২১।
[15] . যঈফ সুনানে ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৭।
[16] . মা তামাসসু ইলাইহিল হাজা লিমান
ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৭।
[17] . আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন, পৃঃ ৪১৮-১৯;
তারীখুত তাশরীঈল ইসলামী, পৃঃ ৯৫।
[18] . কাশফুয যুনূন আন আসামীল কুতুবি ওয়াল
ফুনূন, ১/১০০৪ পৃঃ; মুকাদ্দামাতু তুহফাতিল
আহওয়াযী, ১/১০৮ পৃঃ; আল-হিত্তাহ ফী
যিকরিছ ছিহাহ সিত্তাহ, পৃঃ ২২০।
[19] . মা তামাসসু ইলাইহিল হাজা লিমান
ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৭।
[20] . উলূমুল হাদীছ ওয়াল মুস্তালাহুহূ, পৃঃ
১১৭-১৮।
[21] . মায়ারিফুস সুনান, ১/১৬ পৃঃ।
[22] . ড. রুকাইয়া মুহাম্মাদ আল-মুহারিব, আল-
ইমাম ইবনু মাজাহ (রাঃ) ওয়া কিতাবুহু আস-
সুনান : দিরাসাতুন তাত্ববীকিয়াহ, (সঊদী
আরব : জামি‘আতুল আমীরাহ নূরাহ বিনতু
আব্দির রহমান, ১৪৩৩-৩৪ হিঃ), পৃঃ ৭।
[23] . মা তামাসসু ইলাইহিল হাজা লিমান
ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৭।
[24] . কাইফা নাস্তাফীদু মিন কুতুবিল হাদীছ
আস-সিত্তা, পৃঃ ২৬।
[25] . শাযারাতুয যাহাব ফী আখবারি
মানযাহাব, ২/১৬৪ পৃঃ।
[26] . ঐ, ২/১৬৪ পৃঃ।
[27] . তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৪০ পৃঃ।
[28] . মুকাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী, ১/১৮
পৃঃ; তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৪০ পৃঃ।
[29] . আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন, পৃঃ ৪১৯।
[30] . তাযকিরাতুল হুফফায, ২/৬৩৬ পৃঃ;
মুকাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী, ১/১০৮ পৃঃ।
[31] . আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ
সিত্তাহ, পৃঃ ২২১।
[32] . মা তামাসসু ইলাইহিল হাজা লিমান
ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৭।
[33] . মুকাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী, ১/১০৮
পৃঃ; আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ
সিত্তাহ, পৃঃ ২২০।
[34] . তারীখুত তাশরীঈল ইসলামী, পৃঃ ৯৫।
[35] . যঈফ সুনানে ইবনে মাজাহ, পৃঃ ১১-১২।
[36] . মা তামাসসু ইলাইহিল হাজা লিমান
ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৫।
[37] . আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ
সিত্তাহ, পৃঃ ২২১।
[38]. ইমাম ইবনে মাজাহ (রাঃ) ওয়া কিতাবুহুস
সুনান : দিরাসাতুন তাত্ববীকিয়াহ, পৃঃ ৭।
[39] . আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ
সিত্তাহ, পৃঃ ২২১।
[40] . মুকাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী, ১/১০৮
পৃঃ।
[41] . আত-তুহফাতু লি তালিবিল হাদীছ, পৃঃ
৫৫।
[42] . ইবনু মাজাহ হা/১১০৮ দ্রঃ।
^
^
`
ইসলামিক বই পেতে এখানে ক্লিক করুন
আজকের আইডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url